সোমবার, ডিসেম্বর ২২, ২০২৫
সঠিক সংবাদের প্রয়াসে
  • হোম
  • বিশ্ব
  • বাংলাদেশ
  • যুক্তরাষ্ট্র
  • নিউইয়র্ক
  • বিশ্ব
  • অর্থনীতি
  • বিনোদন
  • খেলা
  • চাকরি
  • মতামত
  • অন্যান্য
No Result
View All Result
সঠিক সংবাদের প্রয়াসে
No Result
View All Result
  • হোম
  • বিশ্ব
  • বাংলাদেশ
  • যুক্তরাষ্ট্র
  • নিউইয়র্ক
  • অর্থনীতি
  • বিনোদন
  • খেলা
  • চাকরি
  • মতামত
  • অন্যান্য
প্রচ্ছদ অপরাধ

হাদি হত্যাকাণ্ড: কেঁপে ওঠা রাষ্ট্র এবং নতুন বাংলাদেশের অগ্নিপরীক্ষা

USA Bangla - USA Bangla
২১ ডিসেম্বর ২০২৫
in অপরাধ, বাংলাদেশ
Reading Time: 1 min read
A A
0
হাদি হত্যাকাণ্ড: কেঁপে ওঠা রাষ্ট্র এবং নতুন বাংলাদেশের অগ্নিপরীক্ষা

রাজু আলীম

সম্পাদক, ইউএসএ বাংলা নিউজ

২০২৫ সালের ডিসেম্বর মাসটি বাংলাদেশের ইতিহাসে যুক্ত হলো এক গভীর বিষাদময় অধ্যায় হিসেবে। যে স্বাধীন, বৈষম্যহীন ও ন্যায্য বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে ছাত্র-জনতার জুলাই অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল, সেই স্বপ্নের অন্যতম কারিগর ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদীর অকাল মৃত্যু শুধু একটি জীবনাবসান নয়, বরং তা নতুন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও নৈতিক ভিতকে প্রবলভাবে নাড়িয়ে দিয়েছে। ১২ ডিসেম্বর ২০২৫ পুরানা পল্টনের জনাকীর্ণ মোড়ে তাকে লক্ষ্য করে ছোড়া গুলিটি কেবল একজন মানুষকে বিদ্ধ করেনি, সেটি আঘাত করেছে জুলাই আন্দোলনের চেতনা, গণতান্ত্রিক প্রত্যাশা এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার বিশ্বাসকে। ছয় দিন সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ১৮ ডিসেম্বর তিনি যখন শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন, তখন সেই খবর টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে এক গভীর শোক ও ক্ষোভের ঢেউ হিসেবে।

 

হাদীর মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঢাকা শহরসহ সারাদেশে যে অভূতপূর্ব বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে, তা স্পষ্ট করে দেয়—তিনি কেবল একজন রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন না, তিনি ছিলেন সময়ের এক প্রতীক। তার উপস্থিতি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে জীবন্ত রেখেছিল, আর তার অনুপস্থিতি সেই চেতনাকে আরও স্পর্শকাতর ও বিস্ফোরক করে তুলেছে। এই হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করলে দেখা হিসেবে তার ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা, তরুণ প্রজন্মকে ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষমতা এবং আপসহীন রাজনৈতিক অবস্থান দেশি-বিদেশি নানা স্বার্থান্বেষী শক্তির কাছে উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছিল। অনেকের দৃষ্টিতে, হাদীকে হত্যা ছিল একটি পরিকল্পিত পদক্ষেপ—পতিত ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগী গোষ্ঠী এবং নির্বাচন ভণ্ডুল করতে আগ্রহী চক্রান্তকারীদের স্বার্থরক্ষার অংশ।

 

হাদীর মৃত্যুর অব্যবহিত পরেই দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে যে অস্থিরতা দেখা দেয়, তা আরও ভয়াবহ রূপ নেয় ১৮ ডিসেম্বর রাতে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত দেশের শীর্ষস্থানীয় দুটি গণমাধ্যম—প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার—কার্যালয়ে একযোগে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা বাংলাদেশের গণমাধ্যম ইতিহাসে এক নজিরবিহীন অধ্যায় হয়ে ওঠে। হামলা চালানো হয় ছায়ানট, উদীচীর প্রধান কার্যালয়ে। শত শত মানুষ লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ভবনগুলোর সামনে অবস্থান নেয়, সিসিটিভি ক্যামেরা ধ্বংস করে এবং নিচতলায় থাকা যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দেয়। এটি ছিল কেবল ভাঙচুর নয়, এটি ছিল ভয় দেখানোর এক নগ্ন প্রদর্শনী। নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীরকে ওই রাতেই শারীরিকভাবে হেনস্তা করার ঘটনা প্রমাণ করে দেয় যে, এই আক্রমণের লক্ষ্য ছিল সামগ্রিকভাবে মুক্ত সাংবাদিকতা।

 

এই হামলার নেপথ্যে কোনো নির্দিষ্ট মাস্টারমাইন্ডের নাম এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রমাণিত না হলেও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর বিশ্লেষণে এটিকে একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখা হচ্ছে। ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সুবিধাভোগী ভাড়াটে চক্র এবং কিছু উগ্রপন্থী স্বার্থান্বেষী মহল এই অরাজকতা সৃষ্টি করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যার উদ্দেশ্য ছিল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করা এবং গণমাধ্যমকে ভীত সন্ত্রস্ত করে সংবাদপ্রবাহ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া। এর ফলাফল হিসেবে প্রথম আলো তাদের ২৭ বছরের এবং দ্য ডেইলি স্টার ৩৫ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নিয়মিত প্রকাশনা ও অনলাইন কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ করতে বাধ্য হয়। এটি শুধু দুটি প্রতিষ্ঠানের সংকট নয়, এটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য এক গভীর কলঙ্ক।

 

ট্র্যাজেডির নির্মমতা এখানেই যে, ওসমান হাদী জীবিত অবস্থায় বারবার সতর্ক করেছিলেন এমন উগ্রতা ও বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ছাড়া কোনো বিপ্লব টিকে থাকতে পারে না। তার বক্তব্য ছিল স্পষ্ট—জুলাই আন্দোলনের ফসল যেন সুবিধাবাদীদের হাতে না যায়। অথচ তার মৃত্যুর পরপরই সেই সুবিধাবাদী শক্তিরাই সক্রিয় হয়ে উঠেছে, যারা লাশের ওপর দাঁড়িয়ে নিজেদের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চায়। গত পনেরো বছরের ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগী এবং অতি উৎসাহী কিছু দলছুট গোষ্ঠী বর্তমানে অস্থিতিশীল পরিবেশকে কাজে লাগিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ ধরার চেষ্টা করছে। হাদীর অনুপস্থিতি বাংলাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় এক শূন্যতা তৈরি করেছে, কারণ তিনি ছিলেন বিভিন্ন মতাদর্শের মানুষের মধ্যে সংলাপ ও ঐক্যের এক কার্যকর সেতু।

 

হাদীর মৃত্যু এবং এর পরবর্তী সহিংসতায় আন্তর্জাতিক মহলেও তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই ঘটনাকে স্বাধীন সাংবাদিকতা ও গণতন্ত্রের ওপর গুরুতর আঘাত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এবং বিচার নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করেছেন। জাতিসংঘ ও এর মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে পৃথক বিবৃতিতে রাজনৈতিক কর্মী ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থতাকে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য অশনিসংকেত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মিডিয়া ফ্রিডম কোয়ালিশন এবং আর্টিকেল ১৯-এর মতো সংস্থাগুলো স্পষ্টভাবে সতর্ক করেছে যে, এ ধরনের ঘটনা ২০২৬ সালের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এই আন্তর্জাতিক চাপ বাংলাদেশের জন্য কেবল কূটনৈতিক নয়, অর্থনৈতিক দিক থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ।

এই পুরো ঘটনাপ্রবাহে ষড়যন্ত্রের গন্ধ ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সতর্কবার্তা জারি করেছে যে, হাদী হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে তৃতীয় কোনো পক্ষ সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বা বড় ধরনের অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করতে পারে। প্রধান অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদের সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার গুঞ্জন এবং তদন্তের ধীরগতি জনমনে ক্ষোভ ও সন্দেহ বাড়াচ্ছে। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন এখন সরল কিন্তু গভীর—দিনের আলোতে যদি একজন পরিচিত নেতাকে গুলি করে হত্যা করা যায় এবং অপরাধীরা অধরা থেকে যায়, তবে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার ওপর আস্থা রাখার অবকাশ কোথায়?

 

সম্পর্কিত

শিক্ষার আধুনিকায়নে তারুণ্যের প্রতীক তানভীর চৌধুরী

শিক্ষা, গবেষণা ও নেতৃত্বে নতুন প্রজন্মের পথপ্রদর্শক: ড. ফারাহনাজ ফিরোজ

এই অনিশ্চয়তার মধ্যেই বিচারের দাবিতে নতুন করে ছাত্র-জনতার জমায়েত শুরু হয়েছে। ‘শহীদ ওসমান হাদী’ নামটি ক্রমে একটি প্রতীকী শক্তিতে রূপ নিচ্ছে, যা নতুন ধরনের রাজনৈতিক মেরুকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি একদিকে যেমন সম্ভাবনার ইশারা, অন্যদিকে তেমনি রাষ্ট্রের জন্য এক কঠিন পরীক্ষা।

 

সবশেষে বলা যায়, ওসমান হাদী হত্যাকাণ্ড নতুন বাংলাদেশের জন্য এক নির্মম অগ্নিপরীক্ষা। তার রক্তস্নাত রাজপথ আজ আমাদের প্রশ্ন করছে—আমরা কি সত্যিই মুক্ত হতে পেরেছি? যদি গণমাধ্যম আক্রান্ত হয়, যদি তরুণ ও সম্ভাবনাময় নেতৃত্বকে গুলি করে স্তব্ধ করে দেওয়া যায়, তবে ‘নতুন বাংলাদেশ’ কেবল একটি স্লোগানে পরিণত হবে। হাদীর স্বপ্ন ছিল এমন এক বাংলাদেশ, যেখানে মত প্রকাশের জন্য কাউকে প্রাণ দিতে হবে না। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে সুবিধাবাদী শক্তির উত্থান ঠেকাতে হবে, ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করতে হবে এবং দোষীদের দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করতে হবে। আজ এই দায় শুধু সরকারের নয়, রাষ্ট্র ও সমাজের প্রতিটি সচেতন মানুষের।

বিশ্বের প্রতিক্রিয়াও হাদী হত্যাকাণ্ডের গুরুত্বকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে। ঘটনার পরপরই জাতিসংঘের মহাসচিবের দপ্তর থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক কর্মী ও নাগরিক আন্দোলনের মুখপাত্রকে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা এবং এর পরপরই গণমাধ্যমে হামলার ঘটনা গভীরভাবে উদ্বেগজনক। জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনের কার্যালয় এই হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন তদন্ত দাবি করে জানায়, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যেকোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব। জাতিসংঘের ভাষায়, ওসমান হাদীর মৃত্যু শুধু একটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়, এটি দক্ষিণ এশিয়ায় গণতন্ত্র ও নাগরিক অধিকারের ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে রাজনৈতিক সহিংসতা ও গণমাধ্যমে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, বাংলাদেশকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে রাজনৈতিক কর্মী, সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা নিরাপদে তাদের মত প্রকাশ করতে পারবেন। যুক্তরাজ্য সরকার এই ঘটনাকে ‘গণতান্ত্রিক চর্চার জন্য গভীরভাবে ক্ষতিকর’ বলে আখ্যা দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন জানিয়েছে, হাদী হত্যাকাণ্ড ও পরবর্তী সহিংসতা ২০২৬ সালের নির্বাচনী পরিবেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে এবং দ্রুত বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিত না হলে বাংলাদেশের ওপর আন্তর্জাতিক আস্থার সংকট তৈরি হতে পারে। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানসহ একাধিক দেশ আলাদাভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোও এক সুরে বলেছে, বিচারহীনতার সংস্কৃতি অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ আরও গভীর অস্থিরতার দিকে এগিয়ে যাবে।

 

এই চাপের মুখে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে বিষয়টির পূর্ণ দায় রাষ্ট্র হিসেবে নেওয়ার কথা বলেন। তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানান, ওসমান হাদী হত্যাকাণ্ড ও গণমাধ্যমে হামলা কোনোভাবেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এটি একটি পরিকল্পিত অরাজকতার অংশ, যার লক্ষ্য নতুন বাংলাদেশের পথচলাকে বাধাগ্রস্ত করা। তিনি বলেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবে এই হত্যাকাণ্ডকে নতুন বাংলাদেশের ওপর সরাসরি আঘাত হিসেবে দেখি। হাদী যে স্বপ্ন দেখতেন, তা ভেঙে দেওয়ার জন্য যারা এই কাজ করেছে, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।” প্রধান উপদেষ্টা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখানোর নির্দেশ দেন এবং তদন্তে কোনো ধরনের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হবে না বলেও আশ্বাস দেন।

হাদীর জানাযা পরিণত হয় এক বিশাল জনসমুদ্রে। ঢাকার রাজপথে সেই দিন মানুষ এসেছিল শুধু শোক জানাতে নয়, বরং একটি অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করতে। বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ, সামাজিক সংগঠন, ছাত্র আন্দোলনের কর্মী, সাধারণ মানুষ—সবাই এক কাতারে দাঁড়িয়ে প্রমাণ করে দেয় যে হাদী কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর নয়, তিনি হয়ে উঠেছিলেন একটি প্রজন্মের কণ্ঠস্বর। জানাযার নামাজ শেষে যখন তার মরদেহ কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে দাফন করা হয়, তখন সেই দৃশ্য নতুন করে প্রতীকি অর্থ বহন করে। বিদ্রোহী কবির পাশে শায়িত হলো আরেক বিদ্রোহী কণ্ঠ, যিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত। অনেকের চোখে এটি কেবল কবরস্থানের একটি স্থান নির্বাচন নয়, এটি ছিল প্রতিবাদের উত্তরাধিকারকে ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়ার এক নীরব ঘোষণা।

 

দাফনের পরপরই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যে শপথ পাঠ শুরু হয়, তা ধীরে ধীরে ‘নতুন বাংলাদেশের শপথ’ নামে পরিচিতি পায়। সেই শপথে বলা হয়, হাদীর হত্যার পেছনে থাকা ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করা হবে, উগ্রবাদ ও সহিংস রাজনীতিকে প্রতিহত করা হবে এবং কোনো শক্তিকেই আর গণতন্ত্রকে জিম্মি করতে দেওয়া হবে না। এই শপথ শুধু আবেগের বহিঃপ্রকাশ ছিল না, বরং এটি ছিল রাষ্ট্র ও সমাজকে নতুন করে গড়ার প্রত্যয়। তরুণদের কণ্ঠে বারবার উচ্চারিত হয়েছে, আধিপত্যবাদ মুক্ত, ভয়ের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসা একটি শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষা।

 

হাদীর রাজনৈতিক অবস্থান নিয়েও নানা অপপ্রচার ছড়ানোর চেষ্টা হয়েছে। বাস্তবতা হলো, তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির চেয়ারম্যান বেগম খালেদা জিয়ার একজন একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন। তিনি কখনো বিএনপির বিরোধিতা করেননি, আবার অন্ধ দলীয় রাজনীতির পথেও হাঁটেননি। তার অবস্থান ছিল স্পষ্ট—তিনি ব্যক্তি, নীতি ও ইতিহাসকে সম্মান করতেন, কিন্তু ক্ষমতার অপব্যবহার ও ফ্যাসিবাদী প্রবণতার বিরুদ্ধে ছিলেন আপসহীন। এই অবস্থানই তাকে অনেকের কাছে গ্রহণযোগ্য করেছে এবং একই সঙ্গে কিছু মহলের জন্য বিপজ্জনক করে তুলেছে। তার রাজনীতি ছিল দলীয় সীমারেখার বাইরে গিয়ে জাতীয় স্বার্থের কথা বলা, যা বর্তমান বাস্তবতায় খুব কম মানুষই সাহস করে করতে পারে।

 

হাদীর মৃত্যুর পর সুবিধাবাদী রাজনীতির যে উত্থান চোখে পড়েছে, তা নতুন বাংলাদেশের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদল মানুষ শোককে পুঁজি করে সহিংসতা ছড়াতে চেয়েছে, আরেক দল গণমাধ্যমকে দমন করে সত্য আড়াল করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু একই সঙ্গে সমাজের ভেতর থেকে একটি প্রতিরোধও গড়ে উঠছে। মানুষ বুঝতে পারছে, এই হত্যাকাণ্ড যদি রাজনৈতিক ফায়দা লোটার হাতিয়ারে পরিণত হয়, তাহলে হাদীর আত্মত্যাগ অর্থহীন হয়ে যাবে। তাই ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করার প্রতিজ্ঞা এখন শুধু স্লোগান নয়, এটি হয়ে উঠেছে নাগরিক দায়িত্বের অংশ।

 

প্রধান উপদেষ্টা তার সর্বশেষ বক্তব্যে বলেন, “উগ্রবাদ, সহিংসতা এবং আধিপত্যবাদ—এই তিনটি জিনিস আমাদের ইতিহাসে বারবার উন্নয়নের পথ রুদ্ধ করেছে। নতুন বাংলাদেশ মানে হবে এই তিনটির বিরুদ্ধে সম্মিলিত লড়াই।” তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা এই সংকটকে ক্ষমতার খেলায় পরিণত না করে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি মজবুত করে। একই সঙ্গে তিনি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় রাষ্ট্রের দায় পুনর্ব্যক্ত করেন এবং বলেন, ভয় দেখিয়ে কোনো সত্যকে চিরদিন চাপা দেওয়া যায় না।

এই মুহূর্তে বাংলাদেশ এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। ওসমান হাদীর মৃত্যু রাষ্ট্রকে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। প্রশ্নটা আর শুধু খুনের বিচার নয়, প্রশ্নটা হলো—এই দেশ কোন পথে যাবে। উগ্রবাদ আর ষড়যন্ত্রের পথে, নাকি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে। হাদীর জীবন ও মৃত্যু আমাদের সামনে সেই নির্বাচনকে আরও স্পষ্ট করে দিয়েছে। তার স্বপ্ন ছিল এমন একটি বাংলাদেশ, যেখানে রাজনৈতিক মতপার্থক্য মানেই শত্রুতা নয়, যেখানে গণমাধ্যম প্রশ্ন করতে পারবে, যেখানে তরুণরা ভয়ের রাজনীতি নয়, আশার রাজনীতি করবে।

শেষ পর্যন্ত হাদী হত্যাকাণ্ড নতুন বাংলাদেশের জন্য এক গভীর ক্ষত হলেও, এটি একই সঙ্গে এক কঠিন শপথের জন্ম দিয়েছে। সেই শপথ হলো—রক্তের দাগ মুছে ফেলার জন্য নয়, বরং সেই দাগকে স্মৃতি হিসেবে বয়ে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার। উগ্রবাদ হটিয়ে, আধিপত্যবাদ মুক্ত, শান্তিপূর্ণ ও মর্যাদাশীল একটি বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয়ই হোক ওসমান হাদীর প্রতি আমাদের প্রকৃত শ্রদ্ধা।

ট্যাগ: অন্তর্বর্তী সরকারওসমান হাদিবাংলাদেশ
শেয়ারTweetPin

সম্পর্কিতপোস্ট

দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতায় সেনাবাহিনীর ভূমিকা: অপরিহার্য এক রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব
বাংলাদেশ

দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতায় সেনাবাহিনীর ভূমিকা: অপরিহার্য এক রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব

১৩ আগস্ট ২০২৫
রিমান্ডে শুধু হাসেন আনিসুল হক, যা জানতে চেয়েছেন
বাংলাদেশ

রিমান্ডে শুধু হাসেন আনিসুল হক, যা জানতে চেয়েছেন

১৭ আগস্ট ২০২৪

সর্বশেষ

শিক্ষার আধুনিকায়নে তারুণ্যের প্রতীক তানভীর চৌধুরী

- USA Bangla
২১ ডিসেম্বর ২০২৫
0

0

শিক্ষা, গবেষণা ও নেতৃত্বে নতুন প্রজন্মের পথপ্রদর্শক: ড. ফারাহনাজ ফিরোজ

শিক্ষা, গবেষণা ও নেতৃত্বে নতুন প্রজন্মের পথপ্রদর্শক: ড. ফারাহনাজ ফিরোজ

- USA Bangla
২১ ডিসেম্বর ২০২৫
0

0

তানজিয়া জামান মিথিলা, বিশ্ব মঞ্চে বাংলাদেশের স্বপ্নীল পথচলা

তানজিয়া জামান মিথিলা, বিশ্ব মঞ্চে বাংলাদেশের স্বপ্নীল পথচলা

- USA Bangla
২১ ডিসেম্বর ২০২৫
0

0

মানবিক শিক্ষা ও উন্নত সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্নদ্রষ্টা মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী

মানবিক শিক্ষা ও উন্নত সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্নদ্রষ্টা মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী

- USA Bangla
২১ ডিসেম্বর ২০২৫
0

0

usa bangla logoo

সঠিক সংবাদ সবার আগে পেতে ইউ এস এ বাংলার সাথেই থাকুন!
ইউ এস এ বাংলা সারা বিশ্বে বাংলার মুখ!

Follow us on social media:

ইউএসএ বাংলা নিউজ
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক : জালাল আহমেদ।
সম্পাদক : রাজু আলীম 

  • আমাদের সম্পর্কে
  • বিজ্ঞাপন
  • লিখতে চাইলে
  • যোগাযোগ

বিভাগ

  • English News
  • অন্যান্য
  • অপরাধ
  • অর্থনীতি
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • চাকরি
  • নিউইয়র্ক
  • প্রযুক্তি
  • বাংলাদেশ
  • বিনোদন
  • বিশ্ব
  • ভারত
  • মতামত
  • যুক্তরাষ্ট্র
  • রাজনীতি
  • সারাদেশ
  • সুস্বাস্থ্য

সর্বশেষ

শিক্ষার আধুনিকায়নে তারুণ্যের প্রতীক তানভীর চৌধুরী

২১ ডিসেম্বর ২০২৫
শিক্ষা, গবেষণা ও নেতৃত্বে নতুন প্রজন্মের পথপ্রদর্শক: ড. ফারাহনাজ ফিরোজ

শিক্ষা, গবেষণা ও নেতৃত্বে নতুন প্রজন্মের পথপ্রদর্শক: ড. ফারাহনাজ ফিরোজ

২১ ডিসেম্বর ২০২৫
  • আমাদের সম্পর্কে
  • বিজ্ঞাপন
  • লিখতে চাইলে
  • যোগাযোগ

© 2025 JNews - Premium WordPress news & magazine theme by Jegtheme.

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In

Add New Playlist

No Result
View All Result
  • হোম
  • বিশ্ব
  • বাংলাদেশ
  • যুক্তরাষ্ট্র
  • নিউইয়র্ক
  • বিশ্ব
  • অর্থনীতি
  • বিনোদন
  • খেলা
  • চাকরি
  • মতামত
  • অন্যান্য

© 2025 JNews - Premium WordPress news & magazine theme by Jegtheme.