রাজু আলীম
সম্পাদক, ইউএসএ বাংলা নিউজ
বাংলাদেশের ব্যাংকিং জগতের অন্যতম প্রাচীন এবং বর্তমানে শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান পূবালী ব্যাংক পিএলসির দীর্ঘ ৬৫ বছরের পরিক্রমা কেবল একটি প্রতিষ্ঠানের বিবর্তন নয় বরং এটি একটি জাতির অর্থনৈতিক উত্তরণ, নীতিগত পরিবর্তন এবং প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসনের এক অনন্য মহাকাব্যিক আখ্যান। ১৯৫৯ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি মুসলিম উদ্যোক্তাদের পুঁজি ও ঋণ প্রাপ্তির পথ সুগম করতে ও আর নিজামের দূরদর্শী নেতৃত্বে “ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংক” নামে যে যাত্রা শুরু হয়েছিল, তা আজ আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর এক সুবিশাল আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে । এই দীর্ঘ এবং চ্যালেঞ্জিং পথপরিক্রমায় ব্যাংকটি রাষ্ট্রীয়করণ, বিরাষ্ট্রীয়করণ, ৫৪ শতাংশ খেলাপি ঋণের দুঃসহ বোঝা এবং প্রায় দেউলিয়া হওয়ার মতো চরম সংকট কাটিয়ে এখন দেশের শীর্ষস্থানীয় মুনাফাকারী ব্যাংকগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে। এই অভাবনীয় সাফল্যের নেপথ্যে গেমচেঞ্জার হিসেবে কাজ করেছেন বিভিন্ন মেয়াদে দায়িত্ব পালনকারী ১৩ জন ব্যবস্থাপনা পরিচালক, যাঁদের প্রত্যেকের মেধা, সাহস এবং কৌশলগত পরিকল্পনা ব্যাংকটিকে বারবার বিপর্যয় থেকে টেনে তুলেছে।
![]()
১৯৫৯ সালে ব্যাংকটির প্রথম ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এম মাহমুদ, যিনি ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে এই প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। তাঁর সময়ে ব্যাংকটি মূলত যাঁরা সে সময়ে পশ্চিম পাকিস্তানি নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ পেতে চরম বৈষম্যের শিকার হতেন সেই বাঙালি ব্যবসায়ীদের একটি নির্ভরযোগ্য আশ্রয়স্থল হিসেবে গড়ে ওঠে। মাহমুদের পরবর্তী সময়ে দায়িত্ব নেন এম খালেদ, যাঁর ১৭ বছরের দীর্ঘ শাসনামল (১৯৬৫-১৯৮২) পূবালী ব্যাংকের ইতিহাসে সবচেয়ে বর্ণাঢ্য এবং চ্যালেঞ্জিং সময় হিসেবে বিবেচিত হয়। এম খালেদ পাকিস্তান আমল থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় পর্যন্ত চরম অস্থির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সামাল দিয়েছিলেন এবং ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর সরকারের জাতীয়করণ নীতির অধীনে ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংক যখন পূবালী ব্যাংকে রূপান্তরিত হয়, তখন তিনিই ছিলেন এই রূপান্তরের প্রধান কান্ডারি। তাঁর সময়েই ঢাকায় বাংলাদেশ ইসলামিক ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের যাত্রা শুরু হয় এবং দেশে ইসলামি ব্যাংকিংয়ের প্রাথমিক ধারণাগুলো বাস্তবায়িত হয়। এম খালেদের দীর্ঘ মেয়াদের পর ১৯৮২ সালের অক্টোবর থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত সময়ের জন্য দায়িত্ব পান আশরাফুল হক, যাঁর সময়ে ব্যাংকটি জাতীয়করণের কুফল হিসেবে চরম অব্যবস্থাপনা এবং অদক্ষ ঋণ বিতরণের ভারে জর্জরিত হতে শুরু করে।
এই সংকট আরও ঘনীভূত হয় যখন ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত ১৪ মাস এমডির দায়িত্ব পালন করেন আব্দুল মতিন খান। এই সময়েই ব্যাংকটির বিতরণকৃত ঋণের ৫৪ শতাংশ খেলাপি হয়ে পড়ে এবং প্রতিষ্ঠানটি প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। এই চরম বিপর্যয় থেকে ব্যাংকটিকে বাঁচাতে তৎকালীন সরকার ১৯৮৪ সালে মাত্র ১৬ কোটি টাকার বিনিময়ে শেয়ার হস্তান্তরের মাধ্যমে পূবালী ব্যাংককে পুনরায় বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। বেসরকারি মালিকানায় ফেরার পর প্রথম এমডি হিসেবে ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন শেখ আমিনুল ইসলাম। তাঁর প্রধান লক্ষ্য ছিল বিশৃঙ্খল হয়ে পড়া ব্যাংকটিতে সুশাসন ফিরিয়ে আনা এবং কর্মীদের মধ্যে সেবার মানসিকতা তৈরি করা। তাঁর মেয়াদে খেলাপি ঋণ আদায়ে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয় এবং ব্যাংকটি বকেয়া আদায়ে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) এবং মিল্ক ভিটার মতো বড় প্রতিষ্ঠানের ভবন নিলামে তোলার মতো সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করে, যা খেলাপি গ্রাহকদের মধ্যে এক শক্তিশালী বার্তা পৌঁছে দেয়। শেখ আমিনুল ইসলামের পর আবারও কিছুদিনের জন্য আব্দুল মতিন খান দায়িত্ব নেন এবং ১৯৯২ সালে দায়িত্ব অর্পণ করেন কাজী আব্দুল মজিদের ওপর। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে আর্থিক খাতের সংস্কারের যে ঢেউ উঠেছিল, কাজী আব্দুল মজিদ তাঁর নেতৃত্ব দিয়ে পূবালী ব্যাংকের শাখা নেটওয়ার্ক এবং ব্যবসায়িক পরিধি বাড়াতে সচেষ্ট হন এবং আমানত সংগ্রহে নতুন কৌশল অবলম্বন করেন। তাঁর সময়ে ব্যাংকটি অনন্য অবস্থানে উঠে আসে। পূবালী ব্যাংকের আধুনিকায়ন ও ধারাবাহিক উন্নতির নতুন পর্ব শুরু হয় কামরুল হুদার হাত ধরে, যিনি ১৯৯৪ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৬ বছর এমডি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কামরুল হুদার সময়ে ব্যাংকটি ধীরে ধীরে লোকসানি প্রতিষ্ঠান থেকে বের হয়ে আসার পথ খুঁজে পায় এবং ২০০০ সাল নাগাদ ব্যাংকের আমানত ৩ হাজার ১০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। তাঁর সময়ে খেলাপি ঋণ ৩৫ শতাংশে নেমে আসে, যা ছিল তাঁর কঠোর ঋণ আদায় প্রক্রিয়ারই ফসল। তবে ব্যাংকটির ইতিহাসে সত্যিকারের মোড় পরিবর্তনকারী বা ‘গেমচেঞ্জার’ হিসেবে আবির্ভূত হন কিংবদন্তি ব্যাংকার খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, যিনি ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন । তিনি ছিলেন একাধারে অর্থনীতিবিদ ও দক্ষ সংগঠক, যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোল ও আইবিএ থেকে এমবিএ সম্পন্ন করেছিলেন । তাঁর ছয় বছরের মেয়াদে পূবালী ব্যাংক নৈতিক ব্যাংকিং এবং সুশাসনের এক অনন্য রোল মডেলে পরিণত হয়। ইব্রাহিম খালেদ ব্যাংকটিকে ২০০৫ সালে ‘সমস্যাযুক্ত ব্যাংক’ বা প্রবলেম ব্যাংকের তালিকা থেকে বের করে আনেন এবং তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বেই ২০০৭ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক এই ব্যাংকটি থেকে তাদের নিযুক্ত পর্যবেক্ষক প্রত্যাহার করে নেয় । তিনি ব্যাংকটিতে একটি পেশাদার কাজের পরিবেশ তৈরি করেছিলেন এবং ব্যাংকিং সেক্টরে অনিয়মের বিরুদ্ধে আপসহীন কণ্ঠস্বর হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন । ইব্রাহিম খালেদের সুযোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে ২০০৬ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করেন হেলাল আহমেদ চৌধুরী, যাঁর হাত ধরে ব্যাংকটি আধুনিক ডিজিটাল বিপ্লবের পথে পা বাড়ায় । হেলাল আহমেদ চৌধুরী ১৯৭৭ সালে এই ব্যাংকেই একজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে সুপিরিয়র সার্ভিস পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ দিয়েছিলেন এবং নিজ যোগ্যতায় এমডি পদে আসীন হন, যা দেশের ব্যাংকিং খাতে একটি বিরল রেকর্ড । ২০১৪ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৮ বছর তাঁর মেয়াদে ব্যাংকটি প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক ব্যাংকিংয়ের দিকে বৈপ্লবিক মোড় নেয় এবং ২০০৯ সালে নিজস্ব কোর ব্যাংকিং সফটওয়্যার চালুর মাধ্যমে বেসরকারি খাতে দেশের বৃহত্তম অনলাইন নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে । তাঁর সময়ে পূবালী ব্যাংক ২০০৯ সালে ডিএইচএল-ডেইলি স্টার ‘বেস্ট ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন’ অ্যাওয়ার্ড জিতে নেয় এবং প্রযুক্তিতে ব্যাপক বিনিয়োগ শুরু করে । হেলাল আহমেদ চৌধুরীর পর ২০১৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ৭ বছর মেয়াদে এমডির দায়িত্ব পালন করেন মো. আব্দুল হালিম চৌধুরী। তিনিও হেলাল আহমেদ চৌধুরীর মতোই ব্যাংকের দীর্ঘদিনের দক্ষ কর্মী ছিলেন এবং তাঁর সময়ে পূবালী ব্যাংক দেশের বৃহত্তম শাখা নেটওয়ার্কের অধিকারী হয় । তাঁর সময়ে খেলাপি ঋণের হার ৩ শতাংশের নিচে নেমে আসে এবং ব্যাংকটি ঢাকা ওয়াসা বিল কালেকশন অ্যাওয়ার্ডসহ নানা প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি অর্জন করে । আব্দুল হালিম চৌধুরীর পর ২০২২ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করেন শফিউল আলম খান চৌধুরী, যিনি ১৯৮৩ সাল থেকে টানা ৩৯ বছর এই ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন । তাঁর মেয়াদে তিনি ব্যাংকের প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কৃতিকে আরও সুসংহত করেন এবং কর্মীদের কল্যাণে বিভিন্ন যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেন। শফিউল আলম খান চৌধুরীর সময়েই ২০২১ সালে ১ হাজার ৯২১ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়ে ব্যাংকটি একটি শক্তিশালী ও অনুপ্রাণিত কর্মীবাহিনী নিশ্চিত করে । সবশেষে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ব্যাংকটির বর্তমান এমডি ও প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মোহাম্মদ আলী, যিনি একজন বুয়েট স্নাতক এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ । মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে পূবালী ব্যাংক এখন এআই এবং মেশিন লার্নিংয়ের মতো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে দ্রুততম সময়ে গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করছে । ২০২৪ সাল নাগাদ তাঁর নেতৃত্বে ব্যাংকটির আমানত ৭৪ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা এবং পরিচালন মুনাফা ২ হাজার ৩২৯ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে । মোহাম্মদ আলী বর্তমানে মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণকারী পাঁচটি খাত—খাদ্য ও খাদ্যসামগ্রী, বস্ত্র ও বস্ত্র সংশ্লিষ্ট খাত, সাশ্রয়ী আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষা খাতে ঋণ বিতরণে বিশেষ জোর দিয়েছেন, যার ফলে খেলাপি ঋণ বর্তমানে ২.৬৭ শতাংশের মতো এক নগণ্য পর্যায়ে নেমে এসেছে । তাঁর হাত ধরেই পূবালী ব্যাংক ২০২৫ সালে আইসিসি ইমার্জিং এশিয়া ব্যাংকিং অ্যাওয়ার্ডে ‘বেস্ট ব্যাংক’ এবং ‘এআই ইমপ্লিমেন্টেশন’ সহ পাঁচটি ক্যাটাগরিতে শীর্ষ পুরস্কার অর্জন করেছে । বর্তমানে ব্যাংকটি তাদের নিজস্ব ‘পাই ব্যাংকিং’ অ্যাপের মাধ্যমে ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রে এক অভাবনীয় বিপ্লব সাধন করছে এবং ভবিষ্যতে নিজেকে একটি বহুজাতিক ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে । পূবালী ব্যাংকের এই ধারাবাহিক সফলতার মূলে রয়েছে প্রতিটি এমডির নিজস্ব দূরদর্শী চিন্তাভাবনা এবং সংস্কারমূলক কর্মকাণ্ড। যেমন ১৯৮৪ সালে যখন ব্যাংকটি বেসরকারি মালিকানায় ফিরে আসে, তখন থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল পূর্বপরিকল্পিত। বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলীর মতে, এই ব্যাংকে কোনো ঋণ কেবল শীর্ষ কর্মকর্তার নির্দেশে দেওয়া হয় না, বরং প্রতিটি প্রস্তাবের বিপরীতে শাখা ও আঞ্চলিক পর্যায় থেকে সরেজমিনে প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করা বাধ্যতামূলক, যার ফলে ব্যাংকটিতে কোনো ভুয়া প্রতিষ্ঠানের ঋণ নেই । খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের সময়ে ব্যাংকটি তাঁর পুরো জীবনে একজন গ্রাহককে সেবা দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল এবং কোনো গ্রাহক ব্যাংক ছেড়ে চলে গেলে শাখা ব্যবস্থাপককে জবাবদিহির আওতায় আনা হয়েছিল । হেলাল আহমেদ চৌধুরীর সময়ে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাবী কর্মী নিয়োগ এবং তাঁদের প্রশিক্ষণের ওপর সর্বোচ্চ জোর দেওয়া হয়েছিল, যা ব্যাংকটির মানবসম্পদকে সম্পদে রূপান্তর করেছে । বর্তমান এমডি মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে ব্যাংকটি প্রযুক্তিনির্ভর হওয়ার পাশাপাশি এখন এলসি খোলার মতো জটিল কাজগুলোও মোবাইল অ্যাপের আওতায় আনার পরিকল্পনা করছে এবং দেশের শীর্ষ ১০টি সাসটেইনেবল ব্যাংকের একটি হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বীকৃতি লাভ করেছে । পূবালী ব্যাংকের এই দীর্ঘ যাত্রায় প্রতিটি এমডিই তাঁদের সময়কাল অনুযায়ী ব্যাংকটিকে একটি মজবুত আর্থিক ভিত্তি এবং সুদৃঢ় সুশাসনের ওপর দাঁড় করিয়েছেন, যার ফলশ্রুতিতে আজ ব্যাংকটি দেশের সাধারণ মানুষের আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। ব্যাংকটি প্রমাণ করেছে যে, যথাযথ নেতৃত্ব এবং সুশাসন থাকলে একটি ৫৪ শতাংশ খেলাপি ঋণের ধুঁকতে থাকা রুগ্ন প্রতিষ্ঠানও দেশের সেরা ব্যাংকে রূপান্তরিত হতে পারে। পূবালী ব্যাংকের এই ১৩ জন ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অবদান কেবল ব্যাংকটির অভ্যন্তরীণ নথিতেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং বাংলাদেশের সামগ্রিক ব্যাংকিং সেক্টরে সুশাসন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তাঁরা একেকজন পথপ্রদর্শক হিসেবে স্বীকৃত। আজ সারা দেশে ৫১৫টি শাখা এবং ২৬৬টি উপশাখা নিয়ে পূবালী ব্যাংক যে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করছে, তার পেছনের মূল শক্তি হলো এই নিরবিচ্ছিন্ন ও আপসহীন নেতৃত্ব এবং দীর্ঘ ২১ বছরের নিরলস সংস্কার প্রক্রিয়া । ভবিষ্যতে ব্যাংকটি যখন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা করবে, তখন এই ঐতিহাসিক রূপান্তরের গল্পটি বিশ্বব্যাপী ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনার জন্য একটি অনুকরণীয় উদাহরণ হিসেবে টিকে থাকবে । পূবালী ব্যাংকের বর্তমান এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনাগুলো আরও স্পষ্ট হয় তাদের সাম্প্রতিক প্রযুক্তিগত অর্জনে। ব্যাংকটি বর্তমানে এআই এবং মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে ক্রেডিট স্কোরিং সিস্টেম চালু করার পথে রয়েছে, যা ঋণ বিতরণ প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ ও দ্রুত করবে । এছাড়াও ব্যাংকটির নিজস্ব ডেটা সেন্টার এবং ডিজাস্টার রিকভারি সেন্টার গ্রাহকদের তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে । ২০২৪ সালে ব্যাংকটি তাদের প্রথম স্বাধীন “সাসটেইনেবিলিটি অ্যান্ড ইমপ্যাক্ট রিপোর্ট” প্রকাশ করেছে, যা আন্তর্জাতিক আইএফআরএস মানদণ্ড অনুসরণ করে তৈরি । এটি প্রমাণ করে যে, ব্যাংকটি কেবল মুনাফার পেছনে ছুটছে না, বরং পরিবেশ এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রতিও সমানভাবে সচেতন । মোহাম্মদ আলী নেতৃত্বে ব্যাংকটি এখন এলসি খোলার মতো জটিল কাজগুলোও মোবাইল অ্যাপের আওতায় আনার পরিকল্পনা করছে । ব্যাংকের অ্যাডভান্স-ডিপোজিট রেশিও বা এডিআর সর্বদা ৮০ শতাংশের নিচে রাখার মাধ্যমে তারা তারল্য ব্যবস্থাপনায় এক অনুকরণীয় আদর্শ স্থাপন করেছে । এই ধরনের রক্ষণশীল অথচ আধুনিক ব্যবস্থাপনাই পূবালী ব্যাংককে দেশের অন্যান্য ব্যাংক থেকে আলাদা করেছে এবং একটি রুগ্ন প্রতিষ্ঠান থেকে আজ এক মহা আর্থিক শক্তিতে রূপান্তর করেছে । এই দীর্ঘ পথচলায় প্রতিটি এমডির অবদান এবং তাদের ব্যক্তিগত সততা ব্যাংকটির ভিতকে ইস্পাত দৃঢ় করেছে, যা আগামী প্রজন্মের ব্যাংকারদের জন্য এক অনন্য প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। পূবালী ব্যাংক প্রমাণ করেছে যে, ধ্বংসস্তূপ থেকেও ফিনিক্স পাখির মতো ডানা মেলে আকাশের শীর্ষে পৌঁছানো সম্ভব, যদি সেখানে থাকে নিষ্ঠাবান নেতৃত্ব আর অবিচল সুশাসন। আজ পূবালী ব্যাংক কেবল একটি নাম নয়, এটি বাংলাদেশের বেসরকারি ব্যাংকিং খাতের এক গৌরবের প্রতীক।