রাজু আলীম
সম্পাদক, ইউএসএ বাংলা নিউজ
![]()
বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা প্রসারে যে কজন তরুণ উদ্যোক্তা ও দূরদর্শী ব্যক্তিত্ব বর্তমানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তানভীর রহমান চৌধুরী তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি সিলেটের প্রথম এবং একমাত্র স্থায়ী সনদপ্রাপ্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার সুযোগ্য নেতৃত্বে এবং প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইমেরিটাস ড. তৌফিক রহমান চৌধুরীর দিকনির্দেশনায় এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এখন কেবল আঞ্চলিক গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নেই, বরং এটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে একটি আধুনিক ও মানসম্মত উচ্চশিক্ষা কেন্দ্র হিসেবে নিজের অবস্থান সুসংহত করেছে। তানভীর রহমান চৌধুরী দীর্ঘ সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সাথে যুক্ত থাকার পর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং তার হাত ধরেই বিশ্ববিদ্যালয়টি অবকাঠামোগত ও প্রশাসনিকভাবে আমূল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে তার সময়েই বিশ্ববিদ্যালয়টি নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাসে পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু করে এবং ২০২৪ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক স্থায়ী সনদ লাভ করে, যা এই প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘ যাত্রায় একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়।
তানভীর রহমান চৌধুরীর দর্শন কেবল পুঁথিগত বিদ্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; তিনি বিশ্বাস করেন প্রকৃত শিক্ষা হলো মানুষের চিন্তা ও আচরণের ইতিবাচক পরিবর্তন। বিভিন্ন নবীন বরণ ও সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তার দেওয়া বক্তব্যগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তিনি সর্বদা শিক্ষার্থীদের বৈশ্বিক নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার আহ্বান জানান। তিনি মনে করেন, বর্তমানের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে গতানুগতিক শিক্ষা দিয়ে টিকে থাকা সম্ভব নয়। তাই তিনি শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দেন আগামীর চ্যালেঞ্জগুলোকে ভয় না পেয়ে সেগুলোকে নতুন সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করতে। তার প্রতিটি বক্তব্যে একটি বিষয় স্পষ্ট থাকে যে, বিশ্ববিদ্যালয় হলো মুক্তচিন্তা ও উদ্ভাবনের সূতিকাগার, যেখানে শিক্ষার্থীরা কেবল চাকরিপ্রার্থী হবে না বরং তারা নিজেরাই কর্মসংস্থান সৃষ্টির সামর্থ্য অর্জন করবে। তিনি বারবার শৃঙ্খলা ও স্বাধীনতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তার মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে যে স্বাধীনতা শিক্ষার্থীরা উপভোগ করে, তা যেন অবশ্যই পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সহনশীলতার গণ্ডির মধ্যে থাকে।
একজন নিভৃতচারী ও কর্মঠ মানুষ হিসেবে তানভীর রহমান চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা পরিবেশকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে, সিলেটের মেধাবী তরুণদের বিশ্বমানের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারলে তারা গুগল, আমাজন কিংবা নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জের মতো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানে নিজেদের মেধা প্রমাণ করতে সক্ষম হবে। তার এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাধুনিক ল্যাবরেটরি, সমৃদ্ধ ডিজিটাল লাইব্রেরি এবং গবেষণার জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করেছেন। শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তার দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত ইতিবাচক; তিনি একটি সুশৃঙ্খল ও বন্ধুসুলভ পরিবেশ নিশ্চিত করতে চান যেখানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞানের আদান-প্রদান হবে স্বতঃস্ফূর্ত। প্রতিষ্ঠাতা ড. তৌফিক রহমান চৌধুরীর সুযোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে তিনি তার পিতার স্বপ্নকে বাস্তবায়নের দায়িত্ব অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে পালন করছেন, যা সংশ্লিষ্ট মহলে ‘টু বডি, ওয়ান মাইন্ড’ হিসেবে প্রশংসিত হয়েছে।
২০০৩ সালে যাত্রা শুরু করা সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি আজ গৌরবের দুই দশক অতিক্রম করে সাফল্যের ২২ বছরে পদার্পণ করেছে। চারটি অনুষদের অধীনে ছয়টি বিভাগ নিয়ে অত্যন্ত সুনামের সাথে পরিচালিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টির ভবিষ্যৎ ভাবনা ও বর্তমান অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আলোকপাত করেছেন তানভীর রহমান চৌধুরী। তার মতে, দুই দশকের এই পথচলায় প্রতিষ্ঠানটি হয়তো এখনো সুদীর্ঘ কোনো ঐতিহাসিক ঐতিহ্য সৃষ্টি করতে পারেনি, কিন্তু উচ্চশিক্ষার মানদণ্ড বজায় রাখার ক্ষেত্রে তাদের যে দৃঢ় অঙ্গীকার ছিল, তা এরই মধ্যে ফল দিতে শুরু করেছে। তারা সফলভাবে নিজেদের অবস্থান প্রমাণ করতে পেরেছেন এবং একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও প্রত্যাশা অনুযায়ী শিক্ষা কার্যক্রমের প্রসার ঘটিয়ে চলেছেন। ২০০৩ সালের মে মাসে প্রতিষ্ঠার পর থেকে যে পথচলা শুরু হয়েছিল, তা আজ একটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে।
দেশের বর্তমান জনমিতি ও অর্থনীতির বিকাশমান ধারাকে বিশ্লেষণ করে তানভীর রহমান চৌধুরী অত্যন্ত দূরদর্শী মন্তব্য করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশের মোট ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে প্রায় ৩৪ শতাংশের বয়স ১৫ বছর বা তার কম। এই বিপুল তরুণ জনগোষ্ঠী দেশের জন্য এক ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’ অর্জনের সুযোগ এনে দিয়েছে। এ সুযোগকে কাজে লাগানো যাবে তখনই, যখন এই বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য যথাযথ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যাবে। গত এক দশকে উচ্চশিক্ষায় ভর্তির হার তিন গুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এত বিপুল চাহিদা পূরণে সক্ষম ছিল না। এ প্রেক্ষাপটে উচ্চশিক্ষার দায় শুধু রাষ্ট্র বহন করবে—এ প্রচলিত ধারণায় পরিবর্তন আসে এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে একাডেমিক উৎকর্ষ অক্ষুণ্ণ রেখে জাতীয় এই দায় ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।
এই পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায়, শিক্ষার্থীদের দোরগোড়ায় সাশ্রয়ী খরচে মানসম্মত উচ্চশিক্ষা পৌঁছে দিতে মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি যাত্রা শুরু করে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুসারে ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তানভীর রহমান চৌধুরী আজ সেই মশাল বহন করছেন। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ঘিরে তারা এখন বৈশ্বিক শিক্ষার্থীদের জন্য দ্বার উন্মুক্ত করছেন। শিক্ষা কেবল ডিগ্রি অর্জনের মাধ্যম নয়, এটি সমাজ ও দেশের জন্য অর্থবহ অবদান রাখতে পারে এমন মানবিক, হৃদয়বান ও সহনশীল মানুষ তৈরির কারখানা। তানভীর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গি এই প্রতিষ্ঠানের মূল শক্তিতে পরিণত হয়েছে। তিনি বিশ্বাস করেন যে, একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেবল ইট-পাথরের দালান নয়, বরং এটি একটি প্রাণবন্ত সমাজ যেখানে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক—এই তিনের মেলবন্ধনে প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব।
বটেশ্বরে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসকে তিনি একটি গ্রিন ক্যাম্পাসে রূপান্তর করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন, যেখানে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারের পাশাপাশি পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায়ও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তিনি মনে করেন, শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নির্মল ও সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারলে তাদের সৃজনশীলতা বহুগুণ বেড়ে যায়। আন্তর্জাতিকীকরণের লক্ষে তানভীর রহমান চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে বিশ্বের বিভিন্ন নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে শিক্ষা ও গবেষণা বিনিময় চুক্তি বা এমওইউ স্বাক্ষরিত হচ্ছে। তিনি চান সিলেটের মাটি থেকে পড়ালেখা করে একজন শিক্ষার্থী যেন সরাসরি বিদেশের উচ্চতর গবেষণায় নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া কোলাবোরেশন বা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সাথে সরাসরি সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে তিনি শিক্ষার্থীদের বাস্তব কর্মক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা লাভের সুযোগ করে দিচ্ছেন।
তার ব্যক্তিগত জীবনের আভিজাত্য ও মার্জিত রুচিবোধ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামোতেও ছাপ ফেলেছে। তিনি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কল্যাণেও অত্যন্ত সচেতন। একটি প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন যে কেবল বড় অবকাঠামোয় নয়, বরং সেখানে কর্মরত মানুষের সন্তুষ্টির ওপর নির্ভর করে, তা তিনি খুব ভালোভাবেই বোঝেন। তাই তার সময়কালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও কর্মপরিবেশে এক অভূতপূর্ব স্থিতি এসেছে। সিলেটের স্থানীয় তরুণদের জন্য তিনি একজন আইকন হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। তারুণ্যের শক্তিকে ইতিবাচক কাজে লাগানো এবং প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধ করে উদ্ভাবনী কাজে সময় ব্যয় করার জন্য তিনি নিয়মিত মোটিভেশনাল বক্তব্য প্রদান করেন।
তানভীর রহমান চৌধুরী তার বক্তব্যে সবসময়ই উল্লেখ করেন যে, সিলেট হলো সুফি-সাধক ও জ্ঞানীদের পুণ্যভূমি। এই ভূমির মর্যাদা রক্ষা করতে হলে তরুণদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। তিনি চান মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি হবে এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে শিক্ষার্থীরা কেবল পুঁথিগত বিদ্যার দাস হবে না, বরং তারা হবে একেকজন উদ্যোক্তা ও নীতিনির্ধারক। তার সুযোগ্য নেতৃত্বে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি আগামীতে একটি টিচিং ইউনিভার্সিটির গণ্ডি পেরিয়ে রিসার্চ ইউনিভার্সিটিতে রূপান্তরের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি নিষ্ঠা ও আগামীর উজ্জ্বল স্বপ্ন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, আগামীকাল আরও দৃশ্যমানভাবে আলোকিত হবে। নির্ধারিত পথরেখা অনুসারে এগিয়ে যেতে তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেন। সব মিলিয়ে তানভীর রহমান চৌধুরী কেবল একটি পরিবারের ঐতিহ্য বহন করছেন না, বরং তিনি সিলেটের উচ্চশিক্ষার মানচিত্রকে নতুনভাবে অঙ্কন করছেন। তার এই সুদূরপ্রসারী চিন্তা ও কর্মপরিকল্পনা আগামী বহু বছর ধরে এই অঞ্চলের শিক্ষা ও সমাজ ব্যবস্থায় এক গভীর প্রভাব বজায় রাখবে। সাশ্রয়ী খরচে মানসম্মত শিক্ষা আর আধুনিক প্রযুক্তির মেলবন্ধনে মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি আজ যে অবস্থানে পৌঁছেছে, তার মূলে রয়েছে তানভীর রহমান চৌধুরীর নিরলস পরিশ্রম এবং আগামীর বাংলাদেশের প্রতি তার গভীর দায়বদ্ধতা।