জলি আহমেদ…
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় অবদান রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা এসব প্রবাসী বাংলাদেশিদের রেমিট্যান্সের ওপর ভর করেই শক্তিশালী হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। কিন্তু তারা সঠিক সেবা পাচ্ছেন না।
এর আগে বিভিন্ন সরকারের কাছে নানা দাবি জানালেও তার বেশির ভাগ পূরণ হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রবাসীরা আশার আলো দেখছেন।
ফলে প্রবাসী বাংলাদেশি ফোরামের ব্যানারে নিউইয়র্কে বসবাসরত প্রবাসীরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সারা বিশ্বের প্রবাসীদের পক্ষে ১৩ দফা দাবি পেশ করার উদ্যোগ নেন।
এ লক্ষ্যে ৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের জুইশ সেন্টারে এক মতবিনিময় সভা হয়। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ঠিকানা নিউজ ও ঠিকানা টেলিভিশনের চিফ ইন এডিটর ও সিইও খালেদ মুহিউদ্দীন।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রবাসী বাংলাদেশি ফোরামের আহ্বায়ক ফখরুল আলম, বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর মহসিন পাটোয়ারী, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আকাশ রহমান, রাজনীতিবিদ রায়হানুল ইসলাম চৌধুরী, এটর্নি শেখ সেলিম, এন মজুমদার (চেয়ারম্যান, কমিউনিটি বোর্ড ৯, ব্রঙ্কস), মাফ মেজবাহ (মূলধারা রাজনীতিবিদ), ডা. ওয়াদুদ ভূইয়া (এক্টিভিস্ট)।

বক্তব্য দেন, আজহারুল হক মিলন, রাজনীতিবিদ আবু নাসের, সাবেক নির্বাচন কমিশনার বাংলাদেশ সোসাইটির বদরুল হক , বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলতাফ চৌধুরী, এক্টিভিস্ট আব্দুর রহিম হাওলাদার (সাবেক সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ সোসাইটি), মোহাম্মদ আলী সাবেক ট্রেজারার, বাংলাদেশ সোসাইটি, এনামুল হায়দার বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, এডভোকেট মুজিবুর রহমান, মোহাম্মদ আবুল কাসেম, হানিফ মজুমদার ট্রেজারার ঢাবি আলামনাই এসোসিয়েশন, সোলেমান ভূইয়া রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান বাচ্চু, হাজী আব্দুর রহমান বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, আনোয়ার হোসেন লিটন রাজনীতিবিদ, হাকিকুল ইসলাম খোকন সাংবাদিক, শাহজাহান শেখ মূলধারা রাজনীতিবিদ ও আবদুল মালেক। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সালেহা কাদির। দাবিনামা উত্থাপন করেন সমাজ সেবক আহসান হাবিব ও জেবিএর ভাইস প্রেসিডেন্ট।
প্রবাসীদের ১৩ দফা দাবি হলো :
১. জাতীয় সংসদে ও রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রবাসীদের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করা।
২. নিউইয়র্ক-ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটে বিমানের সরাসরি ফ্লাইট চালু।
৩. নিউইয়র্কসহ সারা বিশ্বের বাংলাদেশ কনস্যুলেট ও দূতাবাসের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র (ন্যাশনাল আইডি কার্ড) চালু করা, যা ইতিমধ্যে ব্রিটেনে চালু হয়েছে।
৪. নিউইয়র্কসহ সারা বিশ্বের বাংলাদেশ কনস্যুলেট ও দূতাবাসের মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোট প্রদান করার ব্যবস্থা করা।
৫. দেশের ভূমিদস্যুদের হাত থেকে প্রবাসীদের রক্ষা, বিশেষ করে চুক্তি মোতাবেক ক্রয় করা জমি, প্লট, অ্যাপার্টমেন্ট সহজে সংশ্লিষ্ট প্রবাসীর কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা।
৬. ঢাকাস্থ হজরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসীদের হয়রানি বন্ধ করা।
৭. দ্বৈত নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে হয়রানি বন্ধ করা।
৮. বাংলাদেশের অফিস-আদালতে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য বন্ধ করা ও প্রবাসীদের জন্য ঢাকায় চালু করা ওয়ান স্টপ সার্ভিস কার্যকর করা।
৯. প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের অর্থে গড়ে ওঠা অর্থনীতির লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার বন্ধ করাসহ পাচারকারীদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা।
১০. প্রিয় জন্মভূমি সফরকালে প্রবাসীদের জানমালের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা।
১১. বাংলাদেশে প্রবাসীদের ঘর-বাড়ি ও স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি রক্ষার ব্যবস্থা করা।
১২. কনস্যুলেট সেবা বৃদ্ধি করে প্রবাসীদের পাসপোর্ট নবায়ন, জন্মসনদ, মৃত্যুসনদ, দেশের সম্পত্তি হস্তান্তরে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি প্রদানের মতো কাজগুলো সহজ করা এবং
১৩. যেকোনো প্রবাসী বাংলাদেশির মরদেহ বিনা খরচে দেশে নেওয়ার ব্যবস্থা করা।
ঠিকানা নিউজের সিইও খালেদ মুহিউদ্দীন বলেন, যে কোনো দাবি আদায় করতে হলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কথা বলতে হবে। কোনো ইস্যুতে ঐকমত্য হতে না পারলে সাফল্য আসে না। আজকে আপনারা ১৩ দফা দাবি তুলেছেন, সেসব দাবি ড. ইউনূস সাহেবকে জানাতে পারেন। তিনি সুইট টকার। তবে তিনি দাবি মেনে নিলেও লাভ হবে না। দাবিদাওয়ার মধ্যে রাষ্ট্রের প্রায়োরিটি কতখানি, তা দেখতে হবে। আপনারা যেসব দাবি করেছেন, আমি মনে করি সব দাবি পূরণ করা উচিত।
তিনি আরও বলেন, ড. ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রে আসছেন। তার সঙ্গে আমার অন স্ক্রিনে দেখা হবে কি না, জানি না। তবে অফ স্ক্রিনে দেখা হতে পারে। তার সঙ্গে দেখা হলে আমি আপনাদের দাবিদাওয়ার কথাগুলো তাকে বলতে পারি। তবে এ নিয়ে আমি এত বেশি আশাবাদী হতে পারছি না।
খালেদ মুহিউদ্দীন বলেন, আপনারা বিমানের ফ্লাইট চালু করার কথা বলছেন। কিন্তু কাদের দোষে বিমানের ফ্লাইট বন্ধ হলো, সেটা আগে জানা দরকার। আবার কেন এখনো চালু হচ্ছে না, সেটাও জানতে হবে। বিমানের ফ্লাইট চালু হলেও যে আবার বন্ধ হবে না, এর নিশ্চয়তা কী? আপনারা এখানে যারা আছেন, তাদের অর্থে বাংলাদেশের এক বছরের সমান একটি বাজেট হয়ে যাবে। তাই আপনারা ইচ্ছা করলে নিজেরাই বিমানের ফ্লাইট চালু করে ফেলতে পারেন।
সভাপতির বক্তব্যে ফখরুল আলম বলেন, আমরা প্রবাসীদের দাবিদাওয়াগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের কাছে পাঠাব। আশা করি, তারা আমাদের দাবি গুলো দেখবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।