সম্প্রতি ডিবি কার্যালয় থেকে এক ভিডিও বার্তায় কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৬ সমন্বয়ক। তবে বাইরে থাকা অন্যান্য সমন্বয়করা দাবি করছেন, ওই ৬ সমন্বয়ককে জিম্মি করে অস্ত্রের মুখে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা আদায় করা হয়। ফলে ওই ভিডিও বার্তাকে প্রত্যাহার করেন অন্যান্য সমন্বয়করা। তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। ফলে সোমবার সারাদেশে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ কর্মসূচি ও সমাবেশের ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
এক বিবৃতিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের বলেন, সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ও ছাত্রলীগের আক্রমণে নিহত শত শত শহীদের আত্মত্যাগ তিরস্কার করে ডিবি কার্যালয়ে বন্দুকের নলের মুখে জিম্মি করে সমন্বয়কদের মাধ্যমে জোরপূর্বক স্ক্রিপ্টেড বিবৃতি আদায়ের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমাদের দাবি আদায়ে আমরা অবিচল ছিলাম, রয়েছি এবং থাকব।
এরই মধ্যে সোমবার রাতে একটি বিবৃতির মাধ্যমে কর্মসূচি ঘোষণা করেন অন্য সমন্বয়করা। ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা একক ও দলবদ্ধভাবে লাল কাপড় মুখে ও চোখে বেঁধে ছবি তোলা এবং অনলাইনে তা প্রচার করবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, আমাদের আহবানে সাড়া দিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট, নোয়াখালী, রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা, যশোর, ঠাকুরগাঁও সহ সারাদেশব্যপী কর্মসূচি বিক্ষোভ ও ছাত্রসমাবেশ সফল করার জন্য আমরা সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। একই সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবিসমূহের সাথে সংহতি প্রকাশ করার জন্য শিক্ষক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী, শ্রমজীবী ও গণমানুষের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। দেশজুড়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবীকে কেন্দ্র করে নির্বিচারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে শত শত শিক্ষার্থীর মৃত্যু ও হাজার হাজার ছাত্রজনতা আহত হয়ে যখন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে তখনও শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে না নিয়ে একাত্তরের হানাদার বাহিনীর মতো মধ্য রাতে বাসা-বাড়িতে রেইড ব্লকের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের তুলে নিয়ে রিমান্ডের নামে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালানো হচ্ছে।
তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল, মাদ্রাসাসহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও দেশের আপামর জনসাধারণের কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি, একটি নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে আপনারা আগামীকালের কর্মসূচি সফলে সহযোগিতা করুন। আমরা সরকারের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, ছাত্রসমাজের বুকে গুলি চালিয়ে বাংলার ইতিহাসে কোনো আন্দোলন দমন করা যায়নি। অবিলম্বে ছাত্রসমাজের ৯ দফা দাবি মেনে নিয়ে দেশকে স্থিতিশীল করুন।
এদিকে এরই মধ্যে সোমবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। বেশ কিছু স্থানে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বাধা ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। কয়েকটি স্থানে শিক্ষার্থীদের মিছিলে ছাত্রলীগ হামলা চালিয়েছে এবং পুলিশ লাঠিপেটা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় কিছু শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়।
এর আগে ঢাকা মহানগর পুলিশে গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) হেফাজতে থেকেই সব ধরনের কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৬ সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, মো. আবু বাকের, আসিফ মাহমুদ ও নুসরাত তাবাসসুম।
নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলে তাদের মধ্যে তিনজনকে হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ।