রাজু আলীম…
দেশ নিয়ে বিএনপির পরিকল্পনার কথা জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়ার পাশাপাশি তাদের আস্থা অর্জনে যুবদল নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি বলেন, আমাদের আগামী দিনের নীতি জনবান্ধব রাজনীতি। আমাদের লক্ষ্য মানুষের বাক স্বাধীনতা, ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। আমাদের এ বার্তা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। জনগনের আস্থা অর্জন করতে পারলেই আপনি নেতা। জনগণ প্রত্যাখ্যান করলে আপনি নেতা নন।
গত চৌঠা আগস্ট রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের প্রাঙ্গণে জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন ও আমার না বলা কথা’ শীর্ষক সমাবেশের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী যুবদল। সেখানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হোন প্রধান অতিথি তারেক রহমান। অনুষ্ঠানে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যুবদলের নিহত ৭৮ পরিবারের সদস্যদের সম্মাননা ও আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হয়।
গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচনে জেতার জন্য রাজনীতিবিদেরা সাধারণত কিছু কাজ করে থাকেন। যেমন তাঁরা জাতীয় ও স্থানীয় সমস্যার কিছু সমাধানের চেষ্টা করেন; তাঁরা মানুষের উপকারে আসে—এমন কিছু উদ্যোগ নেন।
তারেক রহমান নির্বাচনের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘এই মুহূর্তে বাংলাদেশের মানুষ কথামালার রাজনীতি আর চাচ্ছে না। তারা একটি পরিবর্তন চাচ্ছে। প্রতিশ্রুতি চাচ্ছে না, বরং প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন চাচ্ছে। এই আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে আমরা আগামী দিনের রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রণয়নের চেষ্টা করছি।’
আগামী নির্বাচন খুবই চ্যালেঞ্জিং হতে যাচ্ছে সেটা বলাই বাহুল্য। একদিকে আছে ফ্যাসিবাদী সরকারের সময় ঘটে যাওয়া হত্যা, দুর্নীতি ও অন্য অপরাধগুলোর বিচার করা এবং যেসব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়েছে, সেগুলোকে আবার গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারের তাগিদ।
আরেক দিকে আছে ২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মানুষের যেসব আশা-আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে, সেই চাওয়াগুলোর প্রতিফলন ঘটানোর প্রয়োজনীয়তা।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভবিষ্যৎ ভবিষ্যৎ যদি আমরা পর্যালোচনা করতে যাই, তবে কি বেশ কিছু বিষয় সামনে আসে।
নির্বাচনী মাঠে আওয়ামী লীগের দখল প্রায় শেষ পর্যায়ে। ইন্টারিম সরকার ও নির্বাচন কমিশনের নিষ্পত্তিতে আওয়ামী লীগ ১২ মে ২০২৫ তারিখে রাজনৈতিক দল ভঙ্গ করে দেওয়া হয় এবং তাদের নাম নিবন্ধন স্থগিত করা হয়।
এর ফলে আগামী নির্বাচনে দলটির কোনো অর্থবহ প্রতিযোগিতামূলক ভূমিকা না থাকায় এখন বিএনপি একমাত্র জনসমর্থিত রাজনৈতিক শক্তি হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে।
ভোটগ্রহণ ব্যবস্থা সংস্কারের দাবি তোলার ফাঁকে, ৭৮%-এর বেশি মানুষ এই বছরের অন্তে নির্বাচন চান।
নির্বাচনি মাঠে আরো এগিয়ে থাকতে প্রচারণার পাশাপাশি সন্ধান কমপিটিশ্যন স্ট্র্যাটেজি উন্নয়নমুখী প্রকল্পের বিকল্প নেই।
সেইসব প্রকল্পের দিকে ইঙ্গিত করে সাম্প্রতিক ভাষণে তারেক রহমান বলেন, “বাংলাদেশের জনগণ পরিবর্তন চায়। এখন আর স্বপ্ন কিংবা প্রতিশ্রুতি চায় না। জনগণ এবার প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন চায়। সেই আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে আগামী দিনের রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রণয়নের চেষ্টা করছি। আগামী দিনের নীতি, জনগণের জীবন উন্নয়নের রাজনীতি, দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা—এটি হবে আমাদের রাজনীতির অন্যতম মূল লক্ষ্য। অর্থাৎ মানুষের ভোটের অধিকারকে যে রকম নিশ্চিত করা, মানুষের বাকস্বাধীনতাকে যেমন নিশ্চিত করা, একই সঙ্গে দেশের প্রত্যেকটি মানুষ যার যে যোগ্যতা, সেই হিসেবে তাকে তার অবস্থান থেকে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বা স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা এবং সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে বিএনপির একাধিক টিম দেশের প্রতিটি সেক্টরকে নিয়ে গভীরভাবে কাজ করছে। কর্মসূচি বাস্তবায়নের প্ল্যান-প্রগ্রাম বা কর্মসূচি আমরা পর্যায়ক্রমে তৈরি করছি। হেলথ কেয়ার ওয়ার্কার নিয়োগের পরিকল্পনা করেছি আমরা। এই হেলথ কেয়ার নিয়োগের ৮০ শতাংশ হবে যুবসমাজের মধ্য থেকে নারী সদস্য। তারা একদিকে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ঘটাবে, অন্যদিকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনগণের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় তারা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন।”
নেতৃত্বের কথা বলেছেন না করলে গ্রামের ও মহানগরে বৈচিত্র্যময় নেতৃত্বে বিএনপি’র উপস্থিতি আরও বৃদ্ধি পাওয়া উচিত। মোবাইল কমিউনিকেশন ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রবল অবদান রাখা জরুরি।
বিএনপি-কে অবশ্যই বিজনেস ওয়াচ, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।
সর্বোপরি, সরকার যতই আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা তৈরির চেষ্টা করুক, আর রাজনৈতিক দলগুলো ভোট পেতে যত কৌশলই নিক না কেন; যদি সাধারণ মানুষের আসল সমস্যা ও চাওয়া-পাওয়া নিয়ে সমাজে খোলাখুলি আলোচনা না হয়, আর সেই বিষয়ে জনমত না গড়ে ওঠে, তাহলে সেগুলো উপেক্ষিত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাবে।
একটি দেশের মানুষ যেমন ধরনের নেতা বেছে নেয়, তেমনি নির্বাচনের আগের পরিবেশও অনেক কিছু বলে দেয়—এই নির্বাচন কতটা ভালো বা খারাপ হতে যাচ্ছে। ভোট মানে শুধু ভোটের দিন নয়—এর মধ্যে পড়ে প্রার্থী কে হবেন, জনগণ কেমন করে অংশ নেবে, প্রচার চালানো হবে কেমন করে, ভোট দেওয়ার প্রক্রিয়া কী হবে এবং শেষ পর্যন্ত কেমন প্রতিনিধিরা নির্বাচিত হচ্ছেন। পুরো এই প্রক্রিয়াই সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ার নাম ভোট।
বিএনপি আপাতত শক্তিশালী অবস্থানে রইলেও, আধিপত্য ধরে রাখা তার জন্য সময়মত নির্বাচন ও নির্বাচন ময়দানে প্রস্তুতির পাশাপাশি দলীয় রিফর্ম, নতুন নেতৃত্ব, ও তরুণ ও শহর ভোট আকৃষ্ট করার দিকগুলোতে নজর দিতে হবে। যদি নির্বাচন ডিসেম্বর ২০২৫–এরই মধ্যে হয় এবং সুষ্ঠু হয়, তাহলে বিএনপিই পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে। এছাড়াও কিছু পদ্ধতিগত পরিবর্তন দলে ভিত্তি সুগঠিত রাখতে পারে। তবে নির্বাচনি পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হলে এটি বিদ্রোহ বা অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে, যার জন্য প্রস্তুতি অপরিহার্য।