জলি আহমেদ…
উত্তর আমেরিকার অন্যতম পেশাজীবী সংগঠন ইয়োলো সোসাইটি। এটি কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়; বরং একটি অরাজনৈতিক, পেশাজীবী সংগঠন। যারা কাজ করে প্রবাসীদের কল্যাণে, উন্নয়নে। বাঙালির শেকড়কে আঁকড়ে ধরে ঐক্যবদ্ধ থাকে।
১৯৯৪ সালে নিউইয়র্কে যাত্রা শুরু করে ইয়োলো সোসাইটি। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই এই সংগঠন প্রবাসে বসবাসরত বাঙালিদের স্বার্থ রক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সেই সংগঠন ৩১ বছর পূর্ণ করেছে—একটি গৌরবময় অর্জন, একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক।
তবে এই দীর্ঘ যাত্রা কখনো সহজ ছিল না। নানা বাধা-বিপত্তি, চড়াই উতরায় পেরিয়ে আজ ইয়োলো সোসাইটি। শুধু একটাই লক্ষ্য ছিল প্রবাসী বাংলাদেশিদের স্বার্থরক্ষা। পেছনে ফিরে না তাকিয়ে সামনে এগিয়ে গেছে —একসাথে, একটি পরিবার হয়ে।
এই প্রবাসীদের অনেক দূরে বাংলাদেশে রেখে আসা প্রিয়জনদের দেখা হয় না বহু বছর ধরে। সেই শূন্যতা থেকেই কিছু পরিশ্রমী, মেধাবী সংগঠক গড়ে তোলেন ইয়োলো সোসাইটি নিউইয়র্ক ইনক। যা প্রবাসের মাটিতে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের একটি শক্তিশালী উদাহরণ।
যার লক্ষ্য, সবার সঙ্গে সবার যোগাযোগ, সম্পর্কের গভীরতা বৃদ্ধি, সুখে দুঃখে হাত বাড়িয়ে দেওয়া, প্রিয় মাতৃভূমির শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং শিল্পকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা।
এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিবছরের ন্যায় এবারও আয়োজন করা হয় বনভোজন। ১৩ জুলাই নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ডের হেকশেয়ার স্টেট পার্কে ৩২তম বনভোজন হয়। শত ব্যস্ততার মাঝেও প্রবাসী বাংলাদেশিরা এতে অংশ নেন।
কেউ এসেছেন পরিবারের সঙ্গে, কেউ বন্ধুদের নিয়ে। কেউ এসেছেন দীর্ঘদিন পর দেখা করতে পুরোনো মুখগুলোর সাথে। এই বনভোজন যেন এক ধরনের পুনর্মিলনী— পরিচিত-অপরিচিতের ভিড়ে গড়ে ওঠে নতুন বন্ধন, তৈরি হয় গভীর সম্পর্ক। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি চলা উৎসবটি হয়ে ওঠে প্রবাসী জীবনের এক স্বর্ণালি দিন।
আয়োজনে ছিল প্রাণবন্ত খেলাধুলা। নানা প্রতিযোগিতা, রেফেল ড্র, সংস্কৃতি অনুষ্ঠান, কনসার্ট। যেখানে প্রবাসী শিল্পীরা গানে গানে ছড়িয়ে দেন মুগ্ধতা। গান পরিবেশন করেন রোজিও আজাদ, অমিত কুমার দে ও তানভীর শাহিন।
ইয়োলো সোসাইটির এই বনভোজনে আত্মপ্রকাশ ঘটে ‘সম্প্রতি ১২’ এর। এই সম্প্রীতি ১২ এর মধ্যে লিখিত হয় সাবেক সদস্যদের নাম। তাদের মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত ইয়োলো সোসাইটি।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ইয়োলো সোসাইটি যেসব সম্মানিত সদস্যদের হারিয়েছেন তারা হলেন- সৈয়দ আসাদুজ্জামান, আব্দুল মবিন, চয়ন আহমেদ, কে এইচ আই ইকবাল হোসেন, সঙ্গীয় দীপ চক্রবর্তী প্রদীপ, জহিরুল হক জাদু, আকতারুজ্জামান, লুৎফুর রহমান তরফদার, গোলাম সারোয়ার দুলাল, মোহাম্মদ ইন আবসার, আইয়ুব খান, নাজমুল ইসলাম, নিয়ামুল করিম, সালেহ আহমেদ হেলাল, সাইদুর রহমান, শেখ জামান, আমিন ফারুক, মোরশেদ আহমেদ, এমডি ইমাম হোসেন খান, মতিন আহমেদ জামান, প্রবীর কে ঘোষ, আক্তার হোসেন খান, হাফিজ আহমেদ এঞ্জেল, রেজা খান ডালু, মোহাম্মদ জাহের খান, কামাল উদ্দিন বাদল ও শরিফুজ্জামান মুকুল।
এসব সদস্যরা ইয়োলো সোসাইটির অন্য সদস্যদের জন্য অনুপ্রেরণা। শুধু তাই নয়, ভবিষ্যতে যারা সোসাইটিতে আসবেন তাদের জন্যও অনুপ্রেরণা।
ইয়োলো সোসাইটি একটি পুরনো সংগঠন। এটি অনেকের হাত ধরে এগিয়েছে। সোসাইটির সাবেক সদস্যরা হলেন – মোঃ শাহ আলম, কে এইচ আই ইকবাল হোসেন, লুৎফুর রহমান তরফদার, তালুকদার এস আহমেদ শানু, মোহাম্মদ এ আউয়াল ভাইয়া, শহিদুল খান মানিক, বুলু মিয়া, রবিন খান মজলিস, মোহাম্মদ রাশেদ মামুন, গোলাম মহিউদ্দিন, আখলাকুর রহমান আপন, জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, মোহাম্মদ রেজা খান ডালু, মোঃ আব্দুস সালাম, আলী আক্কাস, আলতাফ হোসেন, সালমান জাহিদ জুয়েল,শেখ ইলিয়াস হাবিব, মাসুদ চৌধুরী। এছাড়া যাকে স্মরণ না করলেই নয়, তিনি হলেন মাইকেল মোতাজাদি।
সভাপতি মো. মাসুদ রানা বলেন, এ বনভোজন কেবল বিনোদনের আয়োজন নয়, এটি আমাদের ঐক্য, পারস্পরিক ভালোবাসা ও সংস্কৃতি উদ্যাপনের এক সেতুবন্ধন। এই আয়োজনের পেছনে যারা কাজ করেছেন, যারা স্পন্সর, যাদের সহযোগিতা ছাড়া এত সুন্দর আয়োজন করা সম্ভব হতো না তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
সাধারণ সম্পাদক শাহিদুল হক রোশন বলেন, আমাদের এই সংগঠনটি প্রবাসের মাটিতে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের একটি শক্তিশালী উদাহরণ। এতবড় আয়োজন করতে গেলে কিছু ভুল ত্রুটি হতে পারে, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সব ভুলের দায় আমি নিচ্ছি। আর সফলতা সবগুলো সাধারণ সদস্য, কার্যকরী পরিষদ, এবং বনভোজন ও উপকমিটির সবার।
আহ্বায়ক শামীম গফুর বলেন, প্রথমবারের মতো বনভোজন কমিটির আহবায়কের দায়িত্ব পেয়ে আমি গর্বিত। এটি সোসাইটির ব্যানারে ৩২তম বনভোজন। ইয়োলো সোসাইটি চিরজীবী হোক। সবার সুস্বাস্থ্য এবং মঙ্গল কামনা করি।
তিন দশক পার করে আজও সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে ইয়োলো সোসাইটি। ভবিষ্যতেও তারা হবে প্রবাসীদের শক্তিশালী ভরসার জায়গা—এই হোক আমাদের প্রত্যাশা।
ইয়োলো সোসাইটির এই আয়োজন প্রমাণ করে— প্রবাসে থেকেও, আমরা হারাইনি আমাদের শেকড়। আমরা বাঙালি, আমরা একতাবদ্ধ। এই মিলনমেলা চলুক প্রতি বছর, নতুন নতুন স্মৃতি নিয়ে।