
নতুন করেই যেন দীর্ঘ বিরোধ শুরু হয়েছে ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের মাঝে। ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন যে ভারতের ওপর ২৫% পরিমাণে দ্বিপাক্ষিক (Reciprocal Tariffs) আরোপ করা হবে, কারণ তিনি দাবি করেন ভারত আমেরিকান পণ্যে অত্যধিক শুল্ক আরোপ করে এবং এটি “massive tariffs” বলে উল্লেখ করেছেন।
এক্ষেত্রে তার যুক্তি হলো, যে দেশ যেমন আমদের শুল্ক আরোপ করে, আমরাও সমপরিমাণ শুল্ক আরোপ করব – এক ধরনের “চোখের বদলে চোখ” নীতি।
২০২৫ সালের ১ আগস্ট থেকে কার্যকর একটি ২৫% শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যা ট্রাম্প প্রশাসনের লক্ষ্য ছিল—বিশেষত ভারতের রাশিয়ান তেল আমদানির কারণে।
ট্রাম্পের দাবি অনুযায়ী এমন কোনো শুল্ক কমানোর প্রতিশ্রুতি তারা দেয়নি, এই বিষয়ে ভারত সরকার পরিষ্কার বিবৃতি দিয়েছে। সিদ্ধান্ত এখনও চলমান আলোচনার অংশ; কোনো চূড়ান্ত চুক্তি হয়নি।
শুল্কনীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টানাপোড়েনের মধ্যেই চীন যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ৩১ আগস্ট চীনের তিয়ানজিন শহরে সাংহাই কো–অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনে মোদি যোগ দেবেন।
আনুষ্ঠানিকভাবে ভারত সরকারের তরফ থেকে এই সফরের কথা ঘোষণা করা না হলেও বিভিন্ন সূত্রের খবর, দুই দিনের সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী মোদি চীন যাওয়া স্থির করেছেন।
২০১৯ সালে এবারের মত নরেন্দ্র মোদি গিয়েছিলেন চীন সফরে। পরবর্তীতে লাদাখের গালওয়ানে ভারত–চীন সংঘর্ষের পর দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছিল। তবে এখন বোঝাই যাচ্ছে যে ধীরে ধীরে দুই দেশের সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে।
সম্পর্কের শীতলতা যে কাটছে তার অন্য প্রমাণও রয়েছে। গত জুনে এসসিও গোষ্ঠীর প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। জুলাই মাসে পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে হাজির হয়েছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। এবার শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপিয়ে দেওয়া শুল্কনীতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের সম্পর্কে এক অন্য মাত্রা যোগ করেছে। দেখা দিয়েছে এক অভূতপূর্ব বাণিজ্য অনিশ্চয়তা। এই পরিস্থিতিতে মোদির চীন সফরের অর্থ শীতলতা কাটিয়ে দুই দেশের আরও কাছাকাছি আসা। মোটাদাগে আমরা একে বলতে পারি “শত্রুর শত্রু হয় বন্ধু।”
যুক্তরাষ্ট্রের ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশসহ মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার অন্যতম কারণ রাশিয়া থেকে ভারত তেল ক্রয় করে সেজন্য। রাশিয়া থেকে জ্বালানি কেনে চীনও। সে জন্য চীনকেও চাপে রেখেছেন ট্রাম্প। ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটেছে। যদিও ভারত–ইরান সম্পর্ক মধুর। এই ভূরাজনৈতিক আবহে মোদি চীন সফরে গেলে তা যথেষ্ট অর্থবহ ও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
এদিকে ভারতের গণযোগাযোগ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, তারা শুধুমাত্র পারস্পরিকভাবে লাভজনক ও ন্যায্য সমঝোতায় বিশ্বাস করে এবং অযথা কম শুল্ক করার জন্য চাপ দেবে না।
অনালিস্ট মাইকেল কুওেলম্যান বলেন, এটি গত ২০ বছরে দুই দেশের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র সঙ্কট, অন্য অনেক কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের দিকে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে ভারতের ওপর কটাক্ষ করে বলেছেন: “মরা অর্থনীতির দেশ”—এছাড়াও তিনি BRICS মঞ্চেও ভারতের ভূমিকা নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন ।
ভারতীয় বিশ্লেষকদের ক্যালকুলেশন অনুযায়ী, ২৫% শুল্কের ফলে বছরে প্রায় $ষ১৮ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে—বিশেষ করে চামড়া, চা, পোশাক, জুয়েলারি, ফার্মাসিউটিক্যালস, ইলেকট্রনিকস ইত্যাদি ক্ষেত্রে।
ভারতের প্রতিক্রিয়া হিসেবে “স্বদেশী উদ্যোগ” শক্তিশালী করা হচ্ছে যাতে দেশীয় উৎপাদন ও রপ্তানি বিকল্পগুলির ওপর জোর দেওয়া হবে।
সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বিবৃতি মতে, তারা প্রথমেই শুল্কের প্রভাব বিশ্লেষণ করবে এবং তারপর কৌশল নির্ধারণ করবে।
ভারত ও ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যে এই শুল্ক-সংকট কেবল বাণিজ্য বিবাদ নয়, বরং কূটনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক প্রভাবও বহন করছে। ভারতের রাশিয়ান তেল আমদানির সাথে সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক সমালোচনা এবং ট্রাম্পের বিজনেস-কেন্দ্রিক নীতিতে এই বিচ্ছেদ তৈরি হয়েছে। বিনিময়সূচক সমঝোতা ছাড়া এই পরিস্থিতি সামলানো কঠিন হতে পারে।