বর্তমানে দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে কোরবানির ঈদে ১৫ লাখ টাকার একটি ছাগল নিয়ে। মুসফিকুর রহমান ইফাত নামের এক তরুণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছাগল কেনা সম্পর্কিত ভিডিও পোস্ট করার পরই শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। ছাগলের এমন অস্বাভাবিক দাম নিয়ে ব্যাপক আলোচনার এক পর্যায়ে বেরিয়ে আসতে থাকে থলের বিড়াল।
এই ইফাত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য মতিউর রহমানের ছেলে বলে খবর প্রকাশ হয়। যদিও রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমান দাবি করেন, ইফাত তার ছেলে নয়। কিন্তু ছেলেকে অস্বীকার করার এই কৌশল ধোপে টেকেনি তার।
ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী স্পষ্টই জানিয়ে দেন মতিউর রহমানই ইফাতের বাবা। তিনি বলেন, ইফাত আমার মামাতো বোন শাম্মী আক্তার শিবুর সন্তান।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর দুই বিয়ে করেছেন। প্রথম স্ত্রীর নাম লাইলা কানিজ। যিনি নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। মতিউর প্রথম স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে থাকেন বসুন্ধরায়। দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আক্তারের সন্তান মুশফিকুর রহমান ইফাত। থাকেন ধানমন্ডির বাসায়। আর তার মা থাকেন কাকরাইলের একটি ফ্ল্যাটে। আর মতিউরের মেয়ে ফারজানা রহমান ইস্পিতা থাকেন কানাডায়।
এখানেই শেষ নয়, গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসতে থাকে এনবিআর কর্মকর্তা মতিউরকে নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য। বেরিয়ে আসে তার সম্পদের পাহাড়। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি এই কর্মকর্তা দুর্নীতির মাধ্যমে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়।
চলুন জেনে নেওয়া যাক এনবিআর কর্মকর্তা মতিউরে কিছু সম্পদের ফিরিস্তি।
পুবাইলের খিলগাঁও মৌজায় ৫৫ বিঘা জমিতে মতিউর রহমানের আপন ভুবন পিকনিক অ্যান্ড শুটিং স্পট। এই রিসোর্টে ১০০ টাকার টিকিট কেটে যে কেউ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুরতে পারেন। নাটক, সিনেমার শুটিংয়ের জন্য ভাড়া দেয়ার বাইরেও এখানে আছে অবকাশ যাপনের সুযোগ।
মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকির নামে নরসিংদীর রায়পুরার মরজালে শতবিঘা জমির ওপর গড়ে তোলা হয়েছে লাকি পার্ক নামে আলিশান রিসোর্ট, যার বর্তমান নাম ওয়ান্ডার পার্ক। এই পার্ক তৈরি করতে গিয়ে জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
ময়মনসিংহের ভালুকা থানার সিডস্টোর এলাকার পাশেই প্রায় ৩০০ বিঘা জমির ওপর মতিউর রহমানের গ্লোবাল জুতা ফ্যাক্টরি। এই ফ্যাক্টরির চেয়ারম্যান তিনি নিজেই। বিভিন্ন দেশে রফতানি হয় এই ফ্যাক্টরির জুতা।
ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সাততলা একটি বাসার দ্বিতীয় তলায় বসবাস করেন মতিউর রহমান। জানা যায়, এই এলাকায় মতিউর রহমান, তার স্ত্রী, পরিবারের সদস্য ও বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনের নামে রয়েছে একাধিক প্লট।
গাজীপুর সদর, রাজধানীর খিলগাঁও, সাভার থানার বিলামালিয়া মৌজায় তার জমির খোঁজ মিলেছে। মতিউর পরিবারের সদস্যদের রয়েছে একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি, যেগুলোর দাম কোটি টাকার ওপর।
এর বাইরেও বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে তার শতকোটি টাকার তথ্য এসেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। এছাড়া পুঁজিবাজারের ব্রোকারেজ হাউসের অংশীদারত্ব থেকে শুরু করে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার রয়েছে তার। সন্তানদের নামে রয়েছে ডজনখানেক কোম্পানির মালিকানা।
তার দুই সন্তান অর্ণব ও ইপসিতার নামে পুঁজিবাজার এবং এর বাইরের প্রায় ডজনখানেক কোম্পানির অংশীদারত্বের নথিপত্র এসেছে। এসব নথিপত্র বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গাজীপুরের গ্লোবাল সু ও গ্লোবাল ম্যাক্স প্যাকেজিং কোম্পানিতে তার দুই সন্তান অর্ণব ও ইপসিতার মালিকানা রয়েছে।
একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়ে এত সম্পদ তিনি কীভাবে করলেন এটাই এখন প্রশ্ন। আর এই সম্পদের তথ্য আড়াল করতে কি তিনি তার ছেলেকে অস্বীকার করেছিলেন? তবে কি তার এসব সম্পদ অবৈধ? এইটাই এখন জনমনে প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। আর এসব প্রশ্নের উত্তর মেলাতে সরকার এখন কি পদক্ষেপ নেবে সেটাই দেখার বিষয়।