রাজু আলীম…
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি’র চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, ২০১৭ সাল থেকে ব্যাংক দখল চর দখলের মতই ঘটেছে।
এর কারণে ২ শতাংশ শেয়ার না থাকলে ব্যাংকের পরিচালক হওয়া যাবে না। এই যে কালাকানুন, এটা ২০১১ সালে জারি হল। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরটা মুষ্টিময় সংখ্যক। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে যে নতুন জমিদার শ্রেণি সৃষ্টি হয়েছিল চিরস্থায়ী বন্দোবস্তার মাধ্যমে, সে ধরনের কিছু সংখ্যক লুটেরা জমিদারের অধীনে যেন ব্যাংকিং খাতটা জিম্মি হয়ে পড়লো।
সেই ধারাতেই ২ শতাংশের ফলে ইসলামী ব্যাংক যারা বানিয়েছিলেন, পরিচালনা করেছিলেন যারা, ইসলামী ব্যাংকের দীর্ঘকালীন চেয়ারম্যানরা। প্রথম চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক লস্কর। তার শেয়ার ছিল, স্পন্সর শেয়ার ৫ লাখ টাকার। এখনকার শেয়ার জন্য যা প্রয়োজন তার থেকে অনেক কম। পরে দীর্ঘসময় যে চেয়ারম্যান ছিলেন কমল রাতোর রহমান। ১৩ বছর তিনি চেয়ারম্যান ছিলেন। মাত্র ৩৫ হাজার টাকা তার শেয়ার হোল্ডিং ছিল। এরপর শাহ আব্দুল হান্নান চেয়ারম্যান ছিলেন, মাত্র ২৫ হাজার টাকা তার শেয়ার হোল্ডিং ছিল। ২ শতাংশের বিধান থাকলে আমরা ইসলামী ব্যাংকে তাদের নেতৃত্ব পেতাম না।
যখন ২ শতাংশের বিধান আসলো তখন এই ধরনের লোকরা সলামী ব্যাংকের নেতৃত্ব থেকে সরে গেলেন। এই বিধান আসার পর ব্যাংক এশিয়ার মত ব্যাংকে সাইদুর জামানের মত প্রখ্যাত অর্থনীতিবীদ তিনি চেয়ারম্যানের যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেন।
তিনি বলেন, অ্যাডম স্মিথ বলেছেন, কোন রাষ্ট্র যখন ব্যবসায়ীদের প্রশাসনিক নেতৃত্বে চলে যায় তখন সেটি হয় সবচেয়ে ক্যু ব্যবস্থা। তিনি বলেন, কিছু সংখ্যাক ব্যক্তি বিশেষের হাতে বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টর জিম্মি হয়ে গেল। বিশ্বে যে ব্যাংকিং সদাচার, যেটা পরিচালিত হয় তা বিকৃত হয়ে গেল। তিনি আরও বলেন, ২০১৭ সালে এক ব্যক্তির হাতে ৭ টি ব্যাংক চলে গেল। চলে যাওয়ার প্রথম প্রক্রিয়ায় ইসলামী ব্যাংক দখল হয়ে গেল। এটাই হচ্ছে এসআলমের হাতে চলে যাওয়ার ব্যাকগ্রাউন্ড।
তিনি বলেন, এটাই হচ্ছে এস আলমের হাতে চলে যাওয়ার ব্যাকগ্রাউন্ড। যদি ২ শতাংশের নিয়ম না থাকত তাহলে ইসলামী ব্যাংকের যারা স্পন্সর ছিলেন, যারা প্রতিষ্ঠা করেছেন তারা ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে থাকতেন। সেখানে বাইরের লোকের ইন্টারফেয়ার করার সুযোগ থাকত না। এই কারণে ইসলামী ব্যাংকের স্পন্সররা ঝড়ে পড়লেন এবং ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টরও এর শিকার হলেন। ব্যাংকটি একটি লুটের রাজ্যে পরিণত হল। আগের ৩ বছর যে ব্যাংকটা শ্রেষ্ট ব্যাংক হিসেবে পরিচালিত হয়েছে
গোটা এশিয়া প্যাসেফিক এবং গালফের শীর্ষ সাড়ে ১১ হাজার সিইও’র মধ্যে আমাকে বেস্ট অ্যাওয়ার্ড দেয়া হয়েছে।
সারা বিশ্বে ইসলামী ব্যাংকের রেফারেন্স পরিগণিত হয়েছে আইডিবি কর্তৃক। সে ব্যাংকটা আজ ধ্বংস হয়ে গেছে। বাংলাদেশের সবকয়টা ইসলামী ব্যাংক ভালো চলছিল। আর আজ ইসলামী ব্যাংকিংটাই যেন একটা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। এই দুর্বৃত্তায়নের কারণে ইসলামী ব্যাংক নামটাই একটা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রতি ৩ মাস পরপর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যে রিপোর্ট করা ব্যাংকিং পারফমেন্স সম্পর্কে। আমাদের টোটাল ব্যাংকিংয়ের ৩৩ শতাংশ ইসলামী পদ্ধতিতে পরিচালিত হচ্ছিল। প্রতি কোয়াটারেই ইসলামী ব্যাংকগুলোর পারফরমেন্স এবং তাদের কন্ট্রিবিউশন ছিল সুদ ভিত্তিক ব্যাংকিং এর থেকে বেটার। কিন্তু ২০১৭ সাল থেকে অবস্থা উল্টে গেল। ইসলামী ব্যাংকগুলো খারাপ হতে হতে, লুটপাত হতে হতে এখন ইসলামী ব্যাংকের নামটা, ইসলামী ব্যাংকের যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল গোটা ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে ইসলামাইজ করার ব্যাপারে সেটা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়ে গেল এবং এটাকে ডিফিকাল্ট করে তোলা হল। এমন একটা অবস্থার সৃষ্টি করা হয়েছে।