কোটা সংস্কারের দাবিতে গেল জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছাত্র-জনতার সরকার পতনের একদফা দাবিতে রূপ নেয়। উত্তাল হয়ে ওঠে সমগ্র বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের একদফা দাবিতে রাস্তায় নেমে আসেন শিক্ষার্থীসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ। ঠিক সেসময় শেখ হাসিনার সরকার নিরীহ ছাত্র-জনতার ওপর অস্ত্র ও পেশিশক্তি প্রয়োগ শুরু করে। এতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি আহত-নিহত হন আন্দোলনরত সাধারণ মানুষও।
রাজপথে যখন রাজনৈতিক (আওয়ামী লীগ) ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দখলে তখন বসে ছিলেন না বিনোদন অঙ্গনের তারকারাও। একদল শিল্পী ছাত্র-জনতার হয়ে সরব ছিলেন রাজপথে। কথা বলেছেন, অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে, আরেক দলের শিল্পীরা ছিলেন হাসিনা সরকারের পক্ষে। শিক্ষার্থীদের ওপর চলা হামলা, দমন-নিপীড়নও তাদের মনকে ন্যায়ের পথে ফেরাতে পারেনি। বরং ছাত্র-জনতার আন্দোলন কীভাবে দমানো যায়, সে বিষয়ে তারা ছিলেন তৎপর। খুলেছিলেন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপও। ‘আলো আসবেই’ নামে সেই গ্রুপে লিমন আহমেদ নামে এক বিনোদন সাংবাদিকও ছিলেন।
সাবেক তথ্যপ্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত ও সংসদ সদস্য ফেরদৌস আহমেদের নেতৃত্বে গ্রুপটি খোলা হয়। শিল্পীদের এই গ্রুপে সাবেক সংসদ সদস্য ও চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ ছাড়াও আরও ছিলেন চিত্রনায়ক রিয়াজ, অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাস, তারিন জাহান, তানভীন সুইটি, সোহানা সাবা, জ্যোতিকা জ্যোতি, অভিনেতা আজিজুল হাকিমসহ অনেকে। সেখানে দেখা যায়, তারা অবস্থান নিয়ে ছিলেন ছাত্রদের আন্দোলনের বিপক্ষে! তারা মত দেন যেভাবেই হোক আন্দোলন থামাতে হবে। আরেকজন শিল্পী পরামর্শ দেন ছাত্রদের ওপর গরম পানি ঢেলে দেওয়ার।
এদিকে স্ক্রিনশটের বিষয়ে সেই গ্রুপের অন্যতম সদস্য অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতি গণমাধ্যকে বলেন, ‘আমাদের এমন একটি গ্রুপ ছিল, এটা সত্য। সেখানে আমি একটি পোস্ট দিয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে আগুন দেওয়ার বিষয় নিয়ে লিখেছিলাম। সেখানে আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদেরও যেতে দেওয়া হচ্ছিল না।
আমার কাছে বিষয়টি খারাপ লেগেছে যে হাসপাতালে কিভাবে মানুষ আগুন দেয়? সেখানে তো আমার-আপনার পরিবারের সদস্যরাই জীবন বাঁচাতে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য আসে।’
অভিনেত্রী বলেন, ‘আপনি হয়তো দেখেছেন, আমি কিন্তু কোনো ছাত্রদের দায়ী করিনি হাসপাতালে আগুন দেওয়ার ঘটনায়। আর এ-ও বলতে চাই, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপটিতে হয়তো আমরা অনেকে ছিলাম। কিন্তু সবার মনমানসিকতা এক না। শিক্ষার্থীদের ওপর গরম পানি ঢেলে দেওয়ার যে বিষয়টি উঠে এসেছে, তা কারো প্রত্যাশার নয়।
ফজলুর রহমান বাবু বলেন, ঢালাওভাবে কাউকে দোষারোপ করা বা সমালোচনা করা ঠিক না। বুধবার নিজের ফেসবুক একাউন্টে এক পোস্ট দেন তিনি।
ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, হোয়াটসঅ্যাপের ‘আলো আসবেই’ গ্রুপে অ্যাড হওয়া প্রসঙ্গে আমার কিছু কথা। একটা গ্রুপের অ্যাডমিনের কাছে ফোন নম্বর থাকলেই তিনি সেই গ্রুপে যাকে খুশি যতজন খুশি অ্যাড করতে পারেন। অনেক গ্রুপ আছে সেখান থেকে চাইলেও কেউ বের হতে পারে না। যদি অ্যাডমিন তাকে ডিলিট না করে।
গ্রুপে কখনও প্রবেশ করেননি দাবি করে বাবু আরও লিখেছেন, ‘আলো আসবেই’ গ্রুপে আমি কখনো প্রবেশ করিনি বা কে কি লিখছে আমি যদি ওখানে না দেখি আমি কি করে জানবো ওখানে কি লিখছে। ঢালাওভাবে কাউকে দোষারোপ করা বা সমালোচনা করা ঠিক না।
এদিকে ছাত্রদের ওপর গরম পানি ঢেলে দেওয়ার নিদের্শ দেওয়া অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাস গোপনে দেশ ছেড়ে কানাডা পাড়ি জমিয়েছেন।
অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতির একটি তথ্যের জবাব দিতে গিয়ে অরুণা পরামর্শ দেন আন্দোলনকারীদের গায়ে ‘গরম জল’ ঢেলে দেওয়ার! তার ভাষ্য ছিল, গরম জল দিলেই হবে।