শেখ হাসিনার একের পর এক ফোনালাপ ফাঁস হচ্ছে। এসব ফোনালাপে দলের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন নির্দেশ দিতে শোনা গেছে। একই সঙ্গে উঠে এসেছে শেখ হাসিনাকে গাজিয়াবাদ থেকে হেলিকপ্টারে করে দিল্লিতে স্থানান্তর প্রসঙ্গ। সেনাবাহিনীর কার্যক্রম, এমনকি ট্রাম্পের ক্যাম্পেইনে থাকার নির্দেশ। যুক্তরাষ্ট্রের কোন দল শেখ হাসিনার পক্ষে কাজ করবে এসব বিষয়।
তানভীরের সঙ্গে যে কথা হলো হাসিনার
বেশ কয়েকটি ফোনকলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় শেখ হাসিনার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী তানভীর কায়সারের ফোনালাপ। ১০ মিনিট ১ সেকেন্ডের এই ফোনালাপে তানভীরকে শেখ হাসিনা বলছেন, ‘আমি দেশের কাছেই আছি, যাতে চট করে ঢুকে যেতে পারি।’
ওই নেতা বিদেশে বসে দেশের নেতাকর্মীদের সহযোগিতা করতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তুমি যেখানে আছো, সেখানে বসেই সহায়তা করো।’
এর আগে তিনি শেখ হাসিনাকে বলেন, ‘যত মামলা নেতাকর্মীদের নামে হয়েছে তা সবই মার্ডার কেস।’ আইনজীবীদের বিষয়ে শেখ হাসিনার কাছে পরামর্শ চাইলে তিনি সব আইনজীবীকে একত্র হয়ে কোর্টে যাতায়াত করার পরামর্শ দেন।
নেতাকর্মীদের ট্রাম্পের ক্যাম্পেইনে থাকার নির্দেশ
ওই কথোপকথন থেকে জানা যায়, যে নেতা শেখ হাসিনাকে ফোন দিয়েছিলেন তিনি যে দেশে রয়েছেন সেখানে আঞ্চলিক নির্বাচন চলছে। শেখ হাসিনা ওই নির্বাচনে নেতাদের সাহায্য করতে বলেন এবং দেশের বিষয়ে তিনি তাদের জানিয়ে রাখতে বলেন।
একসময় তানভীর আলাপচারিতায় কেঁদে দিয়ে বলেন, আপা, আপনি যতদিন আছেন আমরাও ততদিন আছি। আমরা আছি আপনার জন্য। এসময় তাকে অনেকবার ‘আপা আপা’ বলতে শোনা যায়।
ওই নেতা দেশে আসবেন নাকি বিদেশে থেকেই কাজ করবেন, সে বিষয়ে পরামর্শ চান শেখ হাসিনার কাছে। তখন শেখ হাসিনা তাকে বিদেশে বসেই কাজ করার পরামর্শ দেন।
এসময় শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি দূরে নেই। আমাদের দেশের অনেক কাছাকাছি আছি, যাতে চট করেই ঢুকে পড়তে পারি।’
একপর্যায়ে তানভীর বলেন, আপা, আমার মনে হয় এবার ট্রাম্প আসবে। ট্রাম্প আসলে আমাদের জন্য খুবই ভালো আপা।
তখন শেখ হাসিনা বলেন, সে যেই আসুক। তাদের ক্যাম্পেইনে থাকলে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হলে ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। এটা আমি সবাইকে বলেও দিয়েছি।
দিল্লিতে ট্রান্সফারের বিষয়ে যা বললেন শেখ হাসিনা
এই নেতা আরও বলেন, আপা, শুনলাম গাজিয়াবাদ থেকে হেলিকপ্টার দিয়ে দিল্লিতে আপনাকে ট্রান্সফার করছে। তখন শেখ হাসিনা অবাক হয়ে বলেন, এই তথ্য তারা পেলো কই? কোন দেশের হেলিকপ্টার দিয়ে ট্রান্সফার করছে? কী একটা আজগুবি কথা বলে ওরা।
এসময় শেখ হাসিনা ড. ইউনূসের সমালোচনা করেন। তিনি জানান, ড. ইউনূস ২৬ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন।
ওই নেতা কান্না করতে করতে সেনাবাহিনীর কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আপা আপনার পালিত আর্মি এটা কেমনে করলো! এসময় শেখ হাসিনা বলেন, তারা বুঝবে।
আমার বিরুদ্ধে ১১৩টা মামলা হয়েছে
পরে আলাপের মধ্যে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওরা ব্যাংকের টাকা লুটে খাচ্ছে। দেশ আবার দারিদ্র সীমার নিচে যাচ্ছে।’ এ সময় ওই নেতা রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুর্নীতি নিয়ে শেখ হাসিনাকে জড়ানোর কথা বলেন। তখন শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাতে কিছু যায় আসে না।’
মামলার বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমার বিরুদ্ধে ১১৩টা মামলা হয়েছে। এসব জিনিসগুলো নিয়ে জাতিসংঘ থেকে সবার কাছে বলা দরকার, ফলস মামলা দিচ্ছে। আমার পরিবারের কেউ বাকি নাই্। সবার নামে মামলা।
আমেরিকা প্রবাসী কে এই তানভীর
এই তানভীর কায়সারের বিষয়ে জানা যায়, তিনি একজন আওয়ামী লীগ নেতা। ২০১৯ সালের ৪ জুন যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকেন। তার ভিসাটি ছিল ভ্রমণ ভিসা। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের কিছুদিন পরই দাবি করেন যে, আওয়ামী লীগ সরকার তাকে নির্যাতন করেছে। এজন্য তিনি নিজের নিরাপত্তা চান। পরে ২০২০ সালের ৭ মে দেশটিতে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন। এরপর ২০২১ সালের ২৪ জানুয়ারি তার বাংলাদেশি পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে বলেও জানা গেছে। তানভীরের জন্ম ১৯৮৯ সালের ৭ ডিসেম্বর। তার বাবা সোলেমান কায়সার এবং মা নিলুফার ইয়াসমিন। তার স্ত্রীর নাম রুকাইয়া আযাদ। তবে এই তানভীর আওয়ামী লীগের কোন দায়িত্বে আছেন, কোন সূত্রে শেখ হাসিনার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেছেন, সেটি এখনো জানা যায়নি।