বিচারক ও ড. কলিমউল্লাহ, কথোপকথন সুন্দর করে তুলে ধরেছেন টিবিএস…..
বিচারক বলেন, কত সালে নিয়োগ পান ‘২০১৭ সালে?’
ড. কলিমউল্লাহ বলেন, ‘হ্যাঁ।’
বিচারক জানতে চান- ‘ক্যাম্পাস কোথায়?’
কলিমউল্লাহ বলেন, ‘রংপুরে।’
বিচারক বলেন, ‘আপনি তো ফুল টাইম ঢাকায় থাকতেন।’
কলিমউল্লাহ বলেন, ‘না, স্যার। আমি ঢাকায় থাকলেও ওখানে আমার বাংলো ছিল। এর জন্য বেতনের ৪০ শতাংশ কেটে নেওয়া হতো।’
বিচারক বলেন, ‘চাকরিকালে আপনি তো এক হাজার ৩৫২ দিনের মধ্যে এক হাজার ১১৫ দিনই ঢাকায় ছিলেন।’
জবাবে ড. কলিমউল্লাহ বলেন, ‘তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি অন্যায় আবদার করতেন। তার কারণে ক্যাম্পাসে যেতাম না। আমি এই আবদারের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করি। তিনি রাগান্বিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে অপবাদ ছড়িয়েছেন। প্রতিদিন ১৭-১৮ ঘণ্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে কাজ করেছি। মুক্তিযুদ্ধের পর এটাই প্রথম, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিক্ষামন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। এ কারণে দীপু মনি আমার বিরুদ্ধে অপবাদ ছড়িয়েছেন।’
বিচারক বলেন, আপনি ও আপনার মা একই নিয়োগ বোর্ডে ছিলেন?’
ড. কলিমউল্লাহ বলেন, ‘তিনি (তার মা) মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের ডিজি (মহাপরিচালক) ছিলেন। এজন্য সরকার নিয়োগ বোর্ডে সদস্য করেন।’
বিচারক বলেন, ‘আপনি কি ভিসি, বিভাগীয় প্রধান ও ডিন ছিলেন?’
ড. কলিমউল্লাহ বলেন, ‘আমিই প্রথম না। আমার আগের ভিসির ধারাবাহিকতা রক্ষায় এসব দায়িত্বে ছিলাম। বিশেষ পরিস্থিতিতে এ দায়িত্বে থাকতে হয়েছে।’
বিচারক জানতে চান, ‘চার বছরে উন্নয়ন খাতে কোনো টাকা পেয়েছেন?’
ড. কলিমউল্লাহ বলেন, ‘আমার আগের ভিসি নুর নবীর সময় ৯৯ কোটি টাকার কাজ চলমান ছিল। আমি দায়িত্ব নিয়ে কাজ চলমান রেখেছি। আর নকশা পরিবর্তনের অভিযোগ আগের ভিসির বিরুদ্ধে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটাই উন্নয়ন প্রজেক্ট। আমি এসে নিয়োগ বাণিজ্য, চাকরি বাণিজ্য বন্ধ করে দিয়েছি।’
বিচারক বলেন, ‘নিয়োগ বাণিজ্য, চাকরি বাণিজ্য আপনার বিরুদ্ধেই।’
ড. কলিমউল্লাহ বলেন, ‘নো, নেভার, নেভার।’
এ সময় দুদক প্রসিকিউটর দেলোয়ার জাহান রুমি বলেন, ‘উনি ১৭ ঘণ্টা কাজ করেছেন। আমরা তো তাকে টকশোতে দেখেছি।’
ড. কলিমউল্লাহ বলেন, ‘সেটা তো রাতে।’
এ সময় বিচারক দুদক প্রসিকিউটরের কাছে জানতে চান, তার বিরুদ্ধে অন্য মামলা আছে কি না। আদালতকে জানানো হয়, এই মামলাই আছে। নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগের তদন্ত শুরু হবে।
বিচারক বলেন, ‘অভিযোগ আগে, তদন্ত হোক। আপনি কি করেছেন, সেটা আলিমুল গায়েব জানেন, আপনি জানেন। কিছুদিন পর দুদক জানবে। এরপর মানুষ জানবে।’
তখন ড. কলিমউল্লাহ বলেন, ‘গত মাসের ১৮ তারিখে মামলার বিষয় ব্রিফিংয়ে জানানো হয়। আমি ভেবেছিলাম, দুদক থেকে আমাকে তলব করা হবে। আজ সকালে আকস্মিকভাবে নাস্তার পর ডিবি পুলিশ আমাকে গ্রেপ্তার করে। আপত্তি করিনি।’
বিচারক বলেন, ‘আপনি আপত্তি করবেন কেন? আপনার তো জেলে যেতে হবে। কবরেও একা যেতে হবে, জেলখানায়ও একা যেতে হবে। সঙ্গে কেউ যাবে না। দুর্নীতি যারা করছেন, তারা জেলে পচছেন। আর দুর্নীতির টাকায় (আত্মীয়রা) অনেকে বিদেশ ভ্রমণ করছেন।’
ড. কলিমউল্লাহ বলেন, ‘মাননীয় আদালত, কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি। আমি কমিশন্ড অফিসার, গ্রেড-১ পারসন।’
বিচারক তখন বলেন, ‘আপাতত আপনাকে জেলে যেতে হচ্ছে।’
পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।