জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্ক আসছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে তার ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে।
ড. ইউনূসের নিউইয়র্ক সফর উপলক্ষে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে তাকে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া নিয়ে শুরু হয়েছে দৌড়ঝাঁপ। নিউইয়র্কে এ নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই চলছে পাল্টাপাল্টি সভা ও সংবাদ সম্মেলন। বিভিন্ন সংগঠন তাকে সংবর্ধনা দিতে মরিয়া। বিএনপিপন্থি সংগঠনগুলো তো সংবর্ধনা আয়োজনে এরই মধ্যে প্রস্তুতি নিতে আলাপ-আলোচনা শুরু করেছে।
তবে এসব সংবর্ধনার অনুমতি কাউকে দেওয়া হচ্ছে না। ড. ইউনূস কোনো সংগঠন, দল বা ব্যক্তির সংবর্ধনা গ্রহণ করবেন না। শুধুমাত্র সরকারিভাবেই বাংলাদেশ দূতাবাস যে নাগরিক সংবর্ধনা দেবে তাতে অংশ নেবেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসের একটি সূত্র জানিয়েছে, ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ম্যানহাটনের টাইমস স্কয়ার সংলগ্ন ম্যারিয়ট মারক্যুইস হোটেলের বলরুমে সরকারিভাবে তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। উক্ত অনুষ্ঠানে আয়োজন করবে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন এবং নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনসাল জেনারেল।
এদিকে গত শনিবার সন্ধ্যায় সিটির এলমহার্মস্টে নিজস্ব ভবনে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি মোহাম্মদ আবদুর রব মিয়া বলেন, আগের বছরগুলোতে রাজনৈতিক সরকার থাকায় সরকারপ্রধানের যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে সংশ্লিষ্ট দলের মাধ্যমেই সব আয়োজন করা হয়। এতে সাধারণ প্রবাসীরা তাদের দাবি-দাওয়া ও মনের কথা সরকারপ্রধানকে বলার সুযোগ পাননি। কিন্তু ড. ইউনূস একজন সম্মানিত ও নিরপেক্ষ ব্যক্তি। তাই প্রবাসীদের পক্ষ থেকে তাকে সংবর্ধিত করার দাবিদার বাংলাদেশ সোসাইটি।
একই দিনে বিএনপিপন্থি প্রবাসী নাগরিক সমাজের নেতা ড. শওকত আলী বলেন, আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। হল বুক করা আছে। তবে প্রধান উপদেষ্টার অফিস কীভাবে চায় তা দেখতে হবে।
অপরদিকে ইউনূসের নিউইয়র্ক সফরকালে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলার প্রতিবাদে প্রধান উপদেষ্টার যুক্তরাষ্ট্রে আগমনের দিন জেএফকে বিমানবন্দরে কালো পতাকা প্রদর্শনের পাশাপাশি বিক্ষোভ করবেন দলটির নেতাকর্মীরা।
জানা গেছে, নিউইয়র্ক সফরে ইউনূসের সঙ্গে সীমিত আকারে লোকজন যাচ্ছে। নিরাপত্তা দল বাদ দিয়ে ২০-২৫ জনের সফরসঙ্গী থাকছে তার সঙ্গে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, স্বল্প সংখ্যক প্রতিনিধিদল নিউইয়র্ক যাবে। শুধুমাত্র যাদের না নিয়ে গেলেই নয় তাদের দিয়েই সফরসঙ্গী বহর করা হচ্ছে।
ঢাকার এক কূটনীতিক জানান, নিরাপত্তাদল বাদ দিয়ে শেষ পর্যন্ত ২০-২৫ জনের মতো সফরসঙ্গী প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে নিউইয়র্ক যাবেন। প্রতিনিধিদলের সংখ্যা এখনো চূড়ান্ত নয়। তবে ২০-২৫ জনের বেশিও হবে না। এরমধ্যে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের ৭ জন প্রতিনিধিদলে রয়েছেন।
তারা হলেন- দিনা আফরোজ ইউনূস, এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল আলম, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম, প্রধান উপদেষ্টার সহকারী একান্ত সচিব শাব্বীর আহমদ ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আয়েশা সিদ্দিকা তিথি।
অথচ টানা ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকাকালে জাতিসংঘের প্রায় প্রতি অধিবেশনে সরকারপ্রধান হিসেবে যোগ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। প্রতি বারই তিনি নিউইয়র্কে নিয়ে যেতেন বিশাল বহর। ফলে সরকারের খরচ হতো প্রচুর। এ নিয়ে ছিল ব্যাপক সমালোচনাও।