জলি আহমেদ…
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অসংখ্য বাংলাদেশি থাকেন। তাদের মধ্যে কেউ মারা গেলে, কবর দেওয়া নিয়ে পড়তে হয় বিপাকে। মৃত্যুর পর তাদের ঠাঁয় হয় অন্য কোনো ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে। কারণ এখানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য একক কোনো কবরস্থান নেই। এ কথা চিন্তা করে এগিয়ে এসেছে বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটি ইউএসএ ইনক।
তারা কবরস্থানের জন্য ১২৬ একরের বিশাল একটি জমি ক্রয় করেছে। নিউইয়র্কের আপস্টেটের মিডল টাউনে কেনা হয় এই জমি।
যার প্রথম ধাপে প্রস্তুত হবে ২৫ হাজার কবর, এরপর দ্বিতীয় ধাপে হবে ৪০ হাজার কবর। পর্যায়ক্রমে এখানে হবে এক লাখের বেশি কবর হবে।
নোয়াখালী সমিতির নামে এর যাত্রা শুরু হলেও বাংলাদেশি যেকোনো সংগঠন ও ব্যক্তি এখানে কবর কিনতে পারবেন। ‘বাংলাদেশ সেমিট্রি ও ফিউনারেল হোম’ নামে এ প্রকল্পের পুরো কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে এই সমারেই।
এটি হবে মুসলিম কবরস্থান। সম্পূর্নভাবে মুসলিম কৃষ্টি ও চিন্তাধারায় পরিচালিত হবে। পরিপর্ণভাবে মানা হবে ইসলামী নিয়ম কানুন। কার্যক্রমটি অলাভজনক হওয়ায় যে কেউ খুব কম খরচে এখনে কবর সংরক্ষণ করতে পারবেন। এরই মধ্যে এই কবরস্থান টাউন প্লানিং বোর্ডের অনুমোদন পেয়েছে।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ২৪ এপ্রিল কুইন্সের গুলশান ট্যারেসে নোয়াখালী সমিতির নেতারা একটি সভার আয়োজন করে। যাতে উপস্থিত ছিলেন, প্রবাসী বাংলাদেশি, ব্যবসায়ী, সামাজিক ব্যক্তিত্ব, ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।
সমিতি সূত্রে জানা গেছে, এই প্রতিষ্ঠনটি কেনা ও দেখভালোর জন্য রয়েছেন প্রকল্পের আহ্বায়ক মোহাম্মদ রব মিয়া, সদস্য সচিব জাহিদ মিন্টু, এবং খোকন মোশাররফ ও তাজু মিয়া সমন্বয়কারি হিসেবে কাজ করছেন। সহযোগিতায় আছেন সমিতির সভাপতি নাজমুল হাসান মানিক ও সাধারন সম্পাদক ইউসুফ জসিম।
সভায় প্রকল্পের সদস্য সচিব জাহিদ মিন্টু জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সেমিট্রিতে ১ লাখের বেশি কবর সংকুলান হবে। প্রথম পর্যায়ে ৪০ হাজার কবর প্রস্তুত করা হবে।
তিনি আরো জানান, দুরত্ব, মাটির নীচে পানির স্তর, মাটির কোয়ালিটি ও সেমিটারির আয়তনের বিষয়টি বিবেচনা করেই মিডল টাউনকে বেছে নেওয়া হয়েছে। কবরস্থানের জন্য ডিজাইনার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটি ইউএসএর সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি রব মিয়া বলেন, আমরা করোনা মহামারি থেকে চিন্তা করি যে, যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত বাংলাদেশিদের জন্য একটা কবরস্থান দরকার। এরপর এ বিষয়ে গত দুই বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছিলাম। আমরা এখন ১২৬ একর জায়গা ঠিক করেছি। এটা সব বাংলাদেশিদের জন্য উন্মুক্ত।
নিউইয়র্কে বাংলাদেশ সোসাইটির দুইবারের সাবেক সভাপতি ও তিনবারের ট্রাস্টি বোর্ডের নির্বাচিত চেয়্যারম্যান এমএ আজিজ বলেন, এই কবরস্থানের উদ্যোগ যারা নিয়েছেন তাদের আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আপনারা জানেন, আমি যখন বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি ছিলাম, তখন লং আইলেন্ড ওয়াসিংটন মেমোরিয়ালে কিছু খবর খনন করি। আমরা যখন আমেরিকাতে আসি, আমাদের প্রজন্ম ধীরে ধীরে বৃদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমাদের নতুন প্রজন্ম তারা এখানে বসবাস করে। আমাদের প্রবাসীদের কেউ যদি মারা যায় তাহলে মরদেহ দেশে পাঠানো হয়। আমাদের সন্তানরা চাচ্ছে, তাদের বাবা-মায়ের দাফন যেন অন্তত পক্ষে তাদের কাছে, এই যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে দাফন হয়। আমি আশা করবো নতুন এই কবরস্থানে যেন ৫০০ কবর হোক। সবাইকে অনুরোধ করবো এই মহৎ কাজে এগিয়ে আসতে। আমিও ব্যক্তিগতভাবে সব ধরনের সহযোগিতা করে যাবো।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির সভাপতি নাজমুল হাসান মানিক। পরিচালনা করেন সেক্রেটারি ইউসুফ জসিম। প্রকল্পের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন সদস্য সচিব জাহিদ মিন্টু।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আবদুর রব মিয়া, সেক্রেটারি রুহল আমিন সিদ্দিকী, শাহ নেওয়াজ গ্রূপের সিইও শাহ নেওয়াজ, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ গিয়াস আহমেদ, আসাল’র প্রেসিডেন্ট মাফ মেসবাহ উদ্দিন, বাংলাদেশ সোসাইটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার জামাল আহমেদ জনি, ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম এ আজিজ, সাবেক সভাপতি নার্গিস আহমেদ, এটর্নি মঈন চৌধুরী, মুনা’র নির্বাহী পরিচালক আরমান চৌধুরী,জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সভাপতি বদরুল হোসেন খান, শাহ জে চোধুরী, নোয়াখালী সোসাইটির উপদেষ্টা নজির হোসেন, ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান, ট্রাস্টি খোকন মোশারফ, সহ-সভাপতি তাজু মিয়া, সাবেক সেক্রেটারি বেলাল হোসেন, জামাইকা ফ্রেন্ডস্ সোসাইটির সভাপতি ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, কোম্পানীগঞ্জ ওয়েলফেয়ার এশোসিয়েশনের সেক্রেটারি মোশাররফ হোসেন সবুজ, বিয়ানীবাজার সমিতির সভাপতি আব্দুল মান্নান, বগুড়া সোসাইটির সভাপতি মহব্বত আলী আকন্দ ও কাজী ফৌজিয়া প্রমুখ।
আরো ছিলেন, বাংলাদেশ সোসাইটির দুই বারের নির্বাচিত সভাপতি এম এ আজিজ, আল আমিন জামে মসজিদের ইসলামিক সেন্টারের প্রেসিডেন্ট জয়নাল আবেদীন, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান সেলিম, সহ সভাপতি ফারুক চোধুরী।
অনুষ্ঠানের শেষে দোয়া পরিচালনা করেন মাওলানা মীর্জা আবু জাফর বেগ।