পিআর বা অনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি সাধারণ মানুষের কাছে অপরিচিত একটি ধারণা। রাস্তায় যদি এই পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়, শতকরা নিরানব্বই ভাগ মানুষই আসলে জানে না, এটি কীভাবে কাজ করে। এই পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য হল ভোটের অনুপাতকে সংসদে প্রতিফলিত করা, কিন্তু রাজনৈতিক বাস্তবতায় এর বিভিন্ন জটিলতা আছে। বিশেষ করে আমাদের দেশে, যেখানে নির্দিষ্ট নির্বাচনী এলাকা ভিত্তিক প্রতিনিধিত্ব একটি প্রতিষ্ঠিত প্রক্রিয়া, সেখানে পিআর পদ্ধতিতে সেই সরাসরি সংযোগ হারিয়ে যাবে। এতে কোনও এলাকার মানুষ তাদের নিজস্ব নির্বাচিত প্রতিনিধির কাছ থেকে উন্নয়নের দাবী বা সমস্যা সমাধানের সুযোগ হারাতে পারে।
যারা দাবি করেন, পিআর পদ্ধতিতে মনোনয়ন বাণিজ্য কমে যাবে, তাদের যুক্তি বাস্তবসম্মত নয়। বরং তালিকার প্রথম সারিতে নাম তোলার জন্য প্রতিযোগিতা ও লেনদেন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ, যে তালিকার শীর্ষে থাকবে, তার সংসদ সদস্য হওয়ার সম্ভাবনা নিশ্চিত হবে। ফলে কেন্দ্রভিত্তিক প্রভাবশালী গোষ্ঠীর মধ্যে মনোনয়নের জন্য চাপ ও বাণিজ্য আরও বেড়ে যাবে।
এছাড়া এই পদ্ধতিতে কোনও জেলার জন্য প্রতিনিধি না থাকার ঝুঁকি তৈরি হবে। আমাদের বর্তমান ব্যবস্থায় প্রতিটি জেলা সংসদীয় আসনের মাধ্যমে প্রতিনিধিত্ব পায়, যা স্থানীয় উন্নয়ন ও জনসংযোগের জন্য অপরিহার্য। পিআর পদ্ধতিতে সেই নিশ্চয়তা থাকবে না, যা জনগণের প্রত্যাশা পূরণে বড় প্রতিবন্ধকতা হতে পারে। সংসদ সদস্যরা যদি স্থানীয় উন্নয়ন প্রকল্প, রাস্তা-ঘাট, স্কুল-কলেজের নির্মাণ ইত্যাদিতে সরাসরি জড়িত না হন, কিংবা স্থানীয় মানুষের সমস্যায় হাত না বাড়ান, তাহলে জনপ্রতিনিধিত্ব অর্থহীন হয়ে পড়বে।
ফলে এই পদ্ধতিটি আমাদের বাস্তবতায় কার্যকর না হয়ে বরং আরও জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।