প্রফেসর ড. হান্নান চোধুরী, চেয়ারম্যান, গ্রামীণ ব্যাংক ও ভিসি, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি। ড. ইউনূসের সাথে ১৬ বছর কাজ করেছেন। তার বিশেষ সাক্ষাতকার গ্রহণ করেছেন ইউএসএ বাংলার প্রধান সম্পাদক রাজু আলীম।
গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুল হান্নান চৌধুরী বলেন, আমি মূলত শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত একজন ব্যক্তি। ৩৬ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করি। প্রায় ২০ বছর আগে যুক্ত হই নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে।
ড. ইউনূসের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, সোশ্যাল বিজনেস কনসেপ্ট থেকে আমি অনেক বছর ধরেই তার সাথে কাজ করছি। আমাদের মূল কাজ ছিল সোশ্যাল বিজনেস কনসেপ্টটা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়া। অধ্যাপক ইউনূসের গ্লোবাল ইমপেক্টট আমরা বাংলাদেশিরা অনেক সময় বুঝতে পারি না। উনি এমন একজন মানুষ যিনি শুধু নোবেলই পাননি। বরং ভালো কাজের জন্য সারা বিশ্বে ইমপ্যাক্ট সৃষ্টি করেছেন। যাকে সারা পৃথিবীই অন্যভাবে গ্রহণ করে। যে কোন সমস্যার সমাধানে তাকে ব্যবহার করা হয়।
তিনি বলেন, ড. ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি থেকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে সরানো হয়েছে। এতে আমাদের যে লাভ হয়েছে তা না। তার ধারণা থেকে যে গ্রামীণ ব্যাংক তৈরি হয়েছে তা অন্যান্য ব্যাংক থেকে একটু ব্যাতিক্রম। যা সব সময় গরীব মানুষ, মহিলাদের নিয়ে কাজ করে। এটা গতানুগতিক ব্যাংক থেকে আলাদা। আমরা দেখেছি ব্যাংকটি খুব দ্রুত গতিতে সফলভাবে এগিয়েছে। বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা ১ কোটি ৬ লাখের মত এবং এই ব্যাংক এখন পর্যন্ত ৩৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে।
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে নানান প্রতিবন্ধকতা তৈরির বিষয়ে তিনি বলেন, এগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। অনেক মনে করতেন তিনি একজন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়াবেন অথবা ক্ষমতার চূড়ায় এসে দাঁড়াবে। কিন্তু সেরকম মনোভাব উনার মধ্যে আমরা দেখিনি। তিনি বলেন, তার সাথে ফ্রান্স সফরের আগে ফিলিপিন্সে দেখা হয়। ৫ আগস্টে অনেক আগের কথা। তখন তার বিরুদ্ধে করা মামলা নিয়ে কথা হয়। তখন তিনি শুধু তাকিয়ে থাকতেন। মাঝে মাঝে আফসোস করতেন।
পাচার হওয়া টাকা ফেরত সম্পর্কে তিনি বলেন, টাকা বেশ অনেক দিন ধরেই পাচার হয়ে আসছে। ৫ আগস্টের পরও অনেক টাকা সরিয়েছেন। এগুলো ফিরিয়ে আনা সম্ভব। ইতিমধ্যে সরকার টাস্কফোর্স গঠন করেছে। এটা খুব দ্রুত হবে তা মনে করি না। তবে এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে টাকা ফেরতের সুযোগ থাকবে। আইনি চেষ্টা অব্যাহত রাখা উচিত। বর্তমান সরকারও তাদের চেষ্টার কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, ডলার সংকট হলে শুধু গ্রামীণ অর্থনীতি না, সামগ্রিকভাবেই এর একটি প্রভাব থাকবে। সেটা আমরা ইতিমধ্যে দেখছি। আমাদের ডলার সংকট দেখা দিলে সবার ওপরেই তার প্রভাব পরে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনও কৃষি নির্ভরশীল। ডলার সংকটে সার রপ্তানিতে সমস্যা দেখা যায়। ফলে ডলার সংকটে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতেই আঘাত আসবে।
আবদুল হান্নান চৌধুরী গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে বলেন, আমি সদ্য জয়েন করেছি। বিগত সরকার অনেকভাবে ব্যাংকটিকে চাপ দিয়েছে। এখানে সরকারের অনেক লোক ছিল। অনেকে অনেক বেতন নিয়ে গেছে। তারা এখন পালিয়েছেন। তারা চেষ্টা করেছে প্রতিদিনের খরচ বাচাতে। আমি আসার পর আগের বোর্ডের রকম অনেক এজেন্ডা নাকচ করেছি।