মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ। মঙ্গলবার দুপুরে তার বাসভবনে গণমাধ্যমের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, শাস্তি পাওয়ার মতো কোনো অপরাধ করিনি। আমি মনে করি এটা (মার্কিন নিষেধাজ্ঞা) সম্পূর্ণভাবে আমার জন্য প্রযোজ্য নয়।
“আমার ভাই হাঙ্গেরি থাকলেও এটার পুরো প্রসেসের সাথে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই,” বলেন মি. আহমেদ।
তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধম্যে প্রচারিত ডকুমেন্টারির প্রসঙ্গ টেনে আজিজ আহমেদ বলেন, “আল জাজিরাতে অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস ম্যান দেখানো হলো। আমার ভাইকে মিলিটারি কন্ট্রাক্ট দিয়ে করাপশন করেছি, এই অভিযোগ আনা হয়। তখন ইউএন থেকে বক্তব্য দিয়েছিল। যখন আল জাজিরা এটা প্রচার করে তখন আমি আমেরিকাতে।আমি তখন জাতিসংঘ হেডকোয়ার্টারে গিয়ে প্রশ্ন করেছিলাম, তোমরা যে আমাদের কাছে চেয়েছিলে সেটার সব ডকুমেন্ট আমার কাছে আছে। তোমাদের কর্মকর্তা কেন বললো এমন কিছু হয়নি। তখন তারা বলেছিল, যে এটা সঠিক হয়নি।”
তার দায়িত্বকালে ‘ইক্যুপমেন্ট’ কেনা হয়নি দাবি করে মি. আহমেদ বলেন, “এটা (নজরদারির প্রযুক্তি) মিশন এলাকায় দেয়ার জন্য পারচেজ করা হয়েছিল আমি চার বছর বিজিবি’র ডিজি, তিন বছর সেনাপ্রধান ছিলাম। সাত বছরে আমার কোনো ভাইকে আমি একটা কন্ট্রাক্ট দিইনি। কেউ যদি প্রমাণ করতে পারে, আমি পরিণতি মেনে নিতে প্রস্তুত।”
“স্পাইওয়্যার, যে সিগন্যাল ইকুইপমেন্টের কথা বলা হয়েছে, জাতিসংঘ জানতে চায়, ডি আর কঙ্গোর সিগন্যাল কোরের জন্য এই ইকুইপমেন্ট আমরা দিতে পারবো কি না। আমি ২৫ তারিখে দায়িত্ব নিলাম, ২৬ তারিখে কন্ট্যাক্ট সাইন হয়েছে।”
তার দাবি, দুটি বিষয় কাকতালীয়, “তারা লিংক করেছে ইম্যাচিওরড ওয়েতে। কেনা হয়েছে হাঙ্গেরিতে, আমার ভাইটা হাঙ্গেরি ছিল।”
বাংলাদেশের সাবেক এ সেনাপ্রধান বলেন, “বাহিনীর ভাবমূর্তির ব্যাপারে একটা কথাই বলবো, সবসময় একটা বিষয় আমি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে থাকি। বিজিবি, আর্মি প্রেস্টিজিয়াস ইনস্টিটিউশন। সবসময় সতর্ক ছিলাম, আমার কোনো কর্মকাণ্ডে যেন এই দুটি বাহিনীর সুনাম ক্ষুণ্ন না হয়।”
“আমার কাছে মনে হয়, যেহেতু বর্তমান সরকারের সময় আমি সেনাপ্রধান ছিলাম। সরকারকেও হয়তো কিছুটা বিব্রত বা হেয় করার জন্য এই রেস্ট্রিকশনটা হতে পারে,” যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, প্রথম অভিযোগের বিষয়ে বলবো, আমার সেই ভাই, যদিও এখানে নাম উল্লেখ করা হয়নি, আমি জেনারেল হওয়ার অনেক আগে থেকে বিদেশে এবং নিশ্চয়ই সে বৈধ পাসপোর্ট নিয়েই বিদেশে গিয়েছে। সেখানে দেশ থেকে চলে যাওয়ার বা দেশের প্রচলিত আইন ফাঁকি দেওয়ার ক্ষেত্রে আমি আমার পদ-পদবি ব্যবহার করেছি এই অভিযোগ আমি মেনে নিচ্ছি না। মেনে নিতে পারি না, এটি সঠিক না।
দ্বিতীয় অভিযোগের ক্ষেত্রে বলবো, আমি চার বছর বিজিবি প্রধান এবং তিন বছর সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে কেউ যদি একটা প্রমাণ দিতে পারে আমি আমার ভাই বা আত্মীয়কে বিজিবি বা সেনাবাহিনীতে কোনো কন্ট্রাক্ট দিয়েছি, আমি যে কোনো কনসিকোয়েন্স মেনে নিতে প্রস্তুত আছি। আমি আমার কোনো আত্মীয়-স্বজন বা ভাইকে কোনো কন্ট্রাক্ট দেইনি।
গণমাধ্যমকর্মীদের খোঁজ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমার ভাইদের কারও বিজিবি বা সেনাবাহিনীতে ঠিকাদারি করার জন্য কন্ট্রাক্ট নেওয়ার কোনো ধরনের লাইসেন্স আছে কি না খোঁজ নিলেই পেয়ে যাবেন।
আরোপিত নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে আজিজ আহমেদ কোনো প্রতিক্রিয়া জানাবেন কি না- জানতে চাইলে সাবেক এ সেনাপ্রধান বলেন, আমার জানানোর কোনো প্রয়োজন নেই।
তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন কি না জানতে চাইলে বলেন, আমি দুটি প্রশ্নের জবাব দিয়েছি। আমার মনে হয়, আর কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করার কিছু নেই।
অনিয়ম-দুর্নীতিতে সম্পৃক্ততার অভিযোগে বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর। সোমবার (২০ মে) দিনগত রাতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি তাঁর ভাইকে বাংলাদেশে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহি এড়াতে সহযোগিতা করেন। এটা করতে গিয়ে তিনি নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন।