প্রতিহিংসার জেরে এক মাঠে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেছেন শরীয়তপুরের জাজিরার মুসল্লিরা। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
সোমবার (১৭ জুন) সকালে জাজিরা উপজেলার পালেরচর ইউনিয়নের দড়িকান্দি আব্দুল গণি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আলাদা দুটি প্যান্ডেল করে ঈদের নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে মুসল্লিদের।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পালেরচর ইউনিয়নের হাওলাদার ও দড়ি বংশের লোকজনের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। এই দুই সমাজের মানুষের মধ্যে আলাদা মতবাদ থাকায় গত ঈদুল ফিতর থেকে একই মাঠে দুটি প্যান্ডেল করে আলাদা জামায়াতে ঈদের নামাজ আদায় করা হয়। তবে গত বছর পর্যন্ত ওই দুই বংশের লোকজন একই প্যান্ডেলে ঈদের নামাজ আদায় করছেন। আর এই বিভক্ত হওয়ার মূল কারণ হিসেবে দুই বংশের মানুষের মধ্যে হিংসা বিদ্বেষকেই দায়ী করছেন স্থানীয়রা।
এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার ঈদুল আযহার নামাজ হাওলাদার বংশের লোকজন সকাল সাড়ে ৬টায় ও দড়ি বংশের লোকজন সকাল ৭টায় আদায় করেছেন। তবে দুই পক্ষ আলাদাভাবে নামাজ পড়লেও একে অপরের প্রতি কোনো অভিযোগ করছেন না। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে নেটিজেনরা বিভিন্ন ধরনের আলোচনা ও সমালোচনা করে মন্তব্য করেন।
মাহমুদুল হাসান শাকুরী নামে একজন তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে পোস্টে লিখেছেন, এক মাঠে পৃথক দুটি ঈদ জামাত। খোঁজ নিয়ে দেখেন, এই অপকর্মের মূল হোতা বা কুটিলও দুদিন আগে ফেস্টুন বানিয়েছে ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হোক সবার প্রাণ। আমাদের কর্মকাণ্ড দেখে ইবলিশও ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যাচ্ছে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের হেফাজত করুন।
স্থানীয়রা বলছেন, দুই বংশের হাতে গোনা কয়েকজনের মতবিরোধের কারণে ঈদের নামাজের মতো সম্প্রীতির অনুষ্ঠানে এমন বিভক্তের সৃষ্টি হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে হাওলাদার বংশের ও দড়ি বংশের মসজিদের ইমাম মাওলানা আবু সাইদ ও মাওলানা রফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, আমরা মুসলমান হিসেবে ইসলাম ধর্মের সৌন্দর্য রক্ষার বিষয়ে সচেতন না থাকলে আমাদের ধর্ম সম্পর্কে অন্য ধর্মের মানুষ ভুল বার্তা পাবে। তাই বংশগত বিভেদ থাকলে তা সমাধান করে নামাজের মতো বিষয়ে একাত্মতা রাখা জরুরি।
দড়ি বংশের মতিউর রহমান দড়ি বলেন, গত রমজানের ঈদ থেকেই হাওলাদাররা আলাদাভাবে নামাজ পড়া শুরু করে। তার ধারাবাহিকতায় এবারও তারা আলাদা প্যান্ডেলে নামাজ আদায় করেছেন। যদিও আমাদের মুরুব্বিরা সারাজীবন অন্তত ঈদের নামাজ এক জামায়াতে আদায় করে এসেছেন। তবে তাদের প্রতি আমাদের কোনো অভিযোগ নেই।
হাওলাদার বংশের শাহজাহান হাওলাদার বলেন, গ্রামে দড়ি ও হাওলাদার বংশের লোকজনের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হওয়ায় গত ঈদুল ফিতর থেকেই আলাদা জামায়াতে নামাজ আদায় করা হচ্ছে। এর আগে আমরা এক সঙ্গেই ঈদের নামাজ আদায় করতাম। দড়ি বংশের লোকজন আমাদের বলেছিল, তাদের সঙ্গে নামাজ পড়তে। কিন্তু আমাদের লোকজন না মানায় ভিন্ন প্যান্ডেলে নামাজ আদায় করেছি। দড়ি বংশের প্রতি আমাদের কোনো অভিযোগ নেই।
জাজিরা থানার ওসি হাফিজুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। জাজিরার সকল স্থানে মুসল্লিরা নির্বিঘ্নে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। দড়ি কান্দির বিষয়টি নিয়ে আমি কিছুই জানি না।