জলি আহমেদ…
বাংলা চলচ্চিত্রের স্মরণীয় আসর বসেছিল যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে। সুচিত্রা সেন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র এই উৎসবে এসেছিলেন বাংলাদেশ-ভারতের জনপ্রিয় তারকরা। জড়ো হয়েছিলেন বাঙালি সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক আর নেপথ্য সংগঠকরাও।
বিদেশে বাংলা সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দিতে যারা নিরন্তরভাবে কাজ করছেন, তারাও মহানায়িকার স্মরণের এই উৎসবে অংশ নেন।
সবশেষ গত ২১ এপ্রিল উৎসবের পর্দা নামে। এর আগে ২০ এপ্রিল জ্যামাইকা পারফরমিং আর্টস সেন্টারে জমকালোভাবে উৎসব শুরু হয়েছিল। দুদিন লাগাতারভাবে তিন অডিটরিয়ামে ৩৯টি ছবি ও শর্ট ফিল্ম প্রদর্শিত হয়।
আয়োজনটি টিকিটহীন হওয়ায় প্রবাসীরাও অকৃপণচিত্তে সাড়া দেন। আর এ কারণেই জ্যামাইকা পারফরমিং আর্টস সেন্টারে ছিল মানুষের উপচেপড়া ভিড়। দুদিনই ৫০০ আসনের হলটি কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। শেষের দিন অনেক দর্শক অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করতে না পেরে সেন্টারের লবি ও বাইরে আড্ডা দিয়ে সময় কাটান। অনেকে আবার ফিরেও যান বাড়ি।
জমকালো এ আয়োজনে পৃষ্ঠপোশকতা করেছে নিউইয়র্কের বাংলাদেশি মালিকানাধীন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান আশা হোম কেয়ার ও গোল্ডেন এইজ হোম কেয়ার।
আশা হোম কেয়ারের প্রেসিডেন্ট আকাশ রহমান বলেন, মানুষ বাংলা সংস্কৃতিকে পছন্দ করে। আমেরিকার মতো জায়গায় এমন একটি আয়োজন এটাই তার প্রমাণ। আমরা চাই সবাই বাংলা সংস্কৃতিকে ধারণ করুক। আমাদের এই আওয়ার্ডের জন্য প্রায় সাড়ে চারশ মুভি জমা পড়েছিল। কিন্তু ৪০টি মুভি পরিদর্শনের সক্ষমতা ছিল আমাদের। সামনে আরো বড় পরিসরে এমন আয়োজন করা হবে।
উৎসবের শেষদিন বাংলাদেশ-ভারত এই দুই দেশের অভিবাসী ক্যাটাগরিতে ২৫টি পুরস্কার দেওয়া হয়।
উৎসবে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পুরস্কার পায় হাওয়া (বাংলাদেশ), দোআঁশ (ভারত) ও রেডিও (অভিবাসী)। এরমধ্যে ‘পাশা’ সিনেমার নায়ক চরিত্রে অভিনেতা রাজুব ভৌমিক ‘প্রবাসের সেরা অভিনেতা’ হিসেবে পুরস্কার পান। তার হাতে পদক তুলে দেন অভিনেত্রী রেখা আহমেদ ও লুৎফুন্নাহার লতা।
এছাড়া অভিনেতা ফেরদৌস আহমেদ এবং অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়। তাদের হাতে পদক তুলে দেন উৎসবের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক শাহনেওয়াজ ও আকাশ রহমান। শ্রেষ্ঠ পরিচালক হন মেজবাউর রহমান সুমন (হাওয়া) ও সায়ান বন্দ্যোপাধ্যায় (ভারত)। আর শ্রেষ্ঠ ডেব্যু পরিচালক হন যথাক্রমে হৃদি হক (বাংলাদেশ) এবং অভিজিৎ শ্রীদাস (ভারত)।
পুরুষদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ অভিনয়শিল্পী বাংলাদেশের চঞ্চল চৌধুরী, যৌথভাবে প্রসেনজিত ও কৌশিক গাঙ্গুলি (ভারত) এবং রাজুব ভৌমিক (অভিবাসী) নির্বাচিত হন।
আর নারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ অভিনয়শিল্পী নির্বাচিত হন নাজিফা তুশি (বাংলাদেশ), পায়েল সরকার (ভারত) ও সিন্ডি রোলিং (অভিবাসী)। শ্রেষ্ঠ সিনেমাটোগ্রাফার কামরুল হাসান খসরু (বাংলাদেশ) ও শুভজিৎ রায় (ভারত)।
উৎসবে শর্ট ফিল্ম ছুরত (বাংলাদেশ), রজনিগন্ধা (ভারত) এবং লাইট ক্যামেরা মেগা, ও তৃতীয় রিপু (অভিবাসী) পুরস্কার পায়। ডক্যুফিল্মে পুরস্কার পায় ড. নূরুন নবী: একজন আজীবন মুক্তিযোদ্ধা (অভিবাসী-বাংলাদেশি), বাউল: সউল অব বেঙ্গল (অভিবাসী-ভারত)।
শিশুতোষ ক্যাটাগরিতে চলচ্চিত্র মাইক (বাংলাদেশ) ও মানিক কাকুর ক্যামেরা (ভারত)। পপুলার ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ অভিনয়শিল্পী নির্বাচিত হন শাকিব খান ও তমা মির্জা।
এর আগে ২০ এপ্রিল উৎসবের উদ্বোধন করেছিলেন ঢাকাই সিনেমার নায়ক ও সংসদ সদস্য ফেরদৌস আহমেদ।
তিনি বলেন, ধন্যবাদ জানাই সুচিত্রা সেন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজকদের আমাকে এমন একটি আয়োজনে নিমন্ত্রণ জানানোর জন্য। আসলে এমন উৎসব আন্তর্জাতিকভাবে বাংলা সিনেমাকে পরিচিত করার সুযোগ করে দেয়।
এই নায়ক এখন সংসদ সদস্য। এ বিষয়ে তিনি বলেন, সবাই জানেন যে, আমার জীবনে একটা পরিবর্তন এসেছে। এতদিন অভিনয় করতাম মৌসুমী আর ঋতুপর্ণার সঙ্গে। এখন সেদিকে একটু কাজ কমিয়ে চলে গেছি জনগণের প্রতিনিধিত্ব করতে।